
অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেট সবচেয়ে নিকৃষ্ট বাজেট : এরশাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটকে শ্রেষ্ঠ বাজেট আখ্যায়িত করলেও সাধারণ মানুষের কাছে এটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট বাজেট। তিনি বলেন, লুটপাট করে পুরো শেয়ার বাজার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকিং খাত আজ ক্যানসারে আক্রান্ত। ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক লুটপাট চলছে। বেসিক ব্যাংকের লুটপাটে কারা জড়িত তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তারা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? আমরা তাদের নাম জানতে চাই। অবিলম্বে তিনি তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানান।
বুধবার স্পীকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এরশাদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ার মার্কেটকে শক্তিশালী করতে কোনো সুস্পষ্ট উদ্যোগের কতা বলা হয়নি। শক্তিশালী শেয়ার মার্কেট ছাড়া দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা যায় না। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোতে একজন রোগীর সারা দিনের খাবারের জন্য মাত্র ১২৫ টাকা বরাদ্দ। এতো কম টাকায় একজন মানুষের সারাদিনের খাওয়া কী সম্ভব? গরীব মানুষের মোটাচালের দাম কমাতে হবে।
এরশাদ বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। একজন শিক্ষককে চাকরি নিতে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর একজন কনস্টেবলের চাকরির জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ লাগে। এসব বন্ধ করতে হবে। এসব বিষয়ে তিনি প্রধারমন্ত্রীকে নজর দেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানান।
বক্তব্যের শুরুতে এরশাদ ৮২ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতা নেয়ার ক্ষেত্রে নিজের কোনো দোষ ছিলো না দাবি করে বলেন, আমার কোনো দোষ ছিল না। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। আমি নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ ওই নির্বাচনে অংশ না নেননি। নিজের ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এরশাদ বলেন, বিচারপতি সাত্তার নির্বাচন করবেন। আমি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলাম, নির্বাচনের জন্য তাকে সাহায্য করেছিলাম। কিন্তু এক বছরের মাথায় তিনি বললেন, আমার মন্ত্রিসভার সকল সদস্য দুর্নীতিপরায়ণ। আমি দেশ পরিচালনায় অপারগ। সেনাবাহিনীর সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না, কারণ দেশ পরিচালনা করা সহজ ব্যাপার নয়।
এটা আমি উপলব্ধি করি। আমি ক্ষমতা নিতে চাইনি। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না, ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। বাধ্য হয়ে এই দায়িত্ব আমাকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেওয়া নিজের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে এরশাদ বলেন, আমি সেদিন বলেছিলাম, আমি নির্বাচন দিয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পর আবার ব্যারোকে ফিরে যাব। আমি আমার কথা রেখেছিলাম। ১৯৮৪ সালে নির্বাচন দিয়েছিলাম। ওই নির্বাচনে সকলে অংশগ্রহণ করলে আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে পারতাম। দুঃখের বিষয়ে তখন বিএনপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
এখানে আছেন মেনন সাহেব, ইনু সাহেবও অংশগ্রহণ করেননি। এর ফলে আমাকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করতে হয়েছিল। আমাকে মাঝে মাঝে বলা হয় স্বৈরাচার। আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছিল। দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে আমাকে ক্ষমতা নিতে হয়েছিল। কিন্তু এ জন্য আমাকে ৬টি বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। চাঁদ-তারা দেখতে পারিনি। একটা মিষ্টি খেতে চেয়েও পায়নি। আমার শিশুসন্তানকে জেলে আটকে রেখে তার জীবন ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ওই সব কিছু ভুলতে পারিনি। সব মনে আছে। এরশাদ তার জেলজীবন নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃতি করেন।