
ইসলামবিষয়ক বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
অনলাইন ডেস্ক: অর্থ পাচারের অভিযোগে করা এক মামলায় বারবার তলবের পরও হাজির না হওয়ায় ভারতের মুম্বাইয়ের বিশেষ একটি আদালত ইসলামবিষয়ক বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অজামিনযোগ্য এ পরোয়ানা জারি করা হয় বলে বার্তা সংস্থা আইএএনএস এর খবর। আইএএনএসের খবরে জানানো হয়, জাকির নায়েক এখন সৌদি আরবে রয়েছেন।
আইএএনএস লিখেছে, নায়েকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পর বিচারিক কার্যক্রমে সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে সৌদি আরবে চিঠি পাঠাবে ভারত। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগের এনফোর্সমেন্ট অধিদপ্তর এজন্য আদালত থেকে অনুরোধপত্র জোগাড় করার চেষ্টা করছে।
দেশটির আইন প্রয়োগকরী দপ্তর বলছে, এই মামলায় এ বছরের জানুয়ারি মাসে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে প্রথম সমন জারি করা হয়। এরপর আরও তিনবার সমন জারি করা হয়। কিন্তু তিনি আদালতে হাজির হননি। তদন্তে সহযোগিতা করেননি। ওই দপ্তরের বরাত দিয়ে আইএএনএস ও টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে জানানো হয়, জাকির নায়েকের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও তাঁর আত্মীয়স্বজনদের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি রুপি লেনদেন হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে প্রথমে একটি জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। তার পরই ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশের আবেদন করবে।
গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকার গুলশানে অবস্থিত স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২৮ জন নিহত হন। সে সময় বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ করে, জাকির নায়েকের বিভিন্ন বক্তব্যে প্রভাবিত হয়েই সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছিল। এর পর পরই ভারত সরকার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্তের পদক্ষেপ নেয়। জঙ্গিবাদে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশে জাকির নায়েকের মালিকানাধীন ইসলামী টিভি চ্যানেল পিস টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভারতেও চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, জাকির নায়েক নামে পরিচিত হলেও তার প্রকৃত নাম জাকির আবদুল করিম নায়েক। ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম নেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এরপর পড়েছেন কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে। ইউনিভার্সিটি অফ মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অফ মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি ইসলাম-ধর্ম প্রচারের কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ধর্মীয় পণ্ডিত আহমেদ দিদাতের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। জাকিরকে অনেক সময় ‘দিদাত প্লাস’ বলা হয়, এই উপাধি দিদাত নিজে দেন। জাকির নায়েক মুম্বাইয়ের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং ইউনাইটেড ইসলামিক এইডের প্রতিষ্ঠাতা।
ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে তাকে পিস টিভি নেটওয়ার্কের পৃষ্ঠপোষক ও আদর্শিক চালিকাশক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তার স্ত্রী ফরহাত নায়েক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) এর নারীদের শাখায় কাজ করেন। জাকির নায়েক একজন লেখকও। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে তার বেশ কিছু বইপত্র রয়েছে। তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননাও পেয়েছেন। তিনি আলোচনায় আসেন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিশ্লেষণের কারণে। যুক্তিনির্ভর বক্তৃতার কারণে তিনি শিক্ষিত মহলের নজর কুড়াতে সক্ষম হন। তার বক্তৃতার ভিডিও অনলাইনে ব্যাপক সমাদৃত।
মোটামুটি সারা বিশ্বেই রয়েছে এই ধর্ম প্রচারকের ভক্ত-অনুরাগী। তার মালিকাধীন পিস টিভি নেটওয়ার্ক বিভিন্ন ভাষায় সম্প্রচার হয়। পিস টিভির ঠিকানা ভারতের মুম্বাই হলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। কোনো বিজ্ঞাপন ছাড়াই বিত্তশালীদের অনুদানে চলে চ্যানেলটি। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক ধনকুবের জাকির নায়েকের ভক্ত।