
কালের স্বাক্ষী বায়োস্কোপ
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম: “তার পরেতে দেখা গেল, গাঁয়ের বধূ নাইয়র এলো”-এককালে ছেলেবুড়ো থেকে শুরু করে গ্রামের প্রায় সকলেই মুখিয়ে থাকত বায়স্কোপ দেখার জন্য। সবাই মিলে দেখতো একটা বাক্সের মধ্যে সুন্দর করে পোষ্টার ছবি সাজানো বায়োস্কোপ। গ্রামের শিশুরা ছুটতো তার পেছনে পেছনে। হাতে থাকতো তার ঢুগঢুগি। বাক্সের চারখান ফুটোয় আট জোড়া চোখ লাগিয়ে সেই স্বপ্নের সিনেমা দেখতো গাঁও গেরামের মানুষ। এসব বায়স্কোপ এ থাকত মিথ, প্রেম কাহিনী থেকে শুরু করে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, যুদ্ধ-বিগ্রহ পর্যন্ত।
কালের বিবর্তনে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে । হারিয়ে যাচ্ছে শাস্বত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য আর স্বপ্ন । সেখানে স্থান করে নিচ্ছে প্রযুক্তির কৃত্রিমতা। তেমনি হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য বায়োস্কোপ। যা এক সময় ছিল গ্রাম বাংলার শিশুদের চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম। এখন আর চোখে দেখা যায় না বায়োস্কোপ আগে গ্রাম-গঞ্জে হাটে বাজারে ও মেলা গুলোতে দেখা যেত শিশুদের চিত্ত বিনোদনের এ মাধ্যম। গ্রাম বাংলায় মেলা বসলেই বিভিন্ন জেলা থেকে বায়োস্কোপ মেলাতে বসত। মেলায় বায়োস্কোপ বসলেই আগ্রহ করে সবাই দেখত। এর মধ্যে শিশুদের আগ্রহটা ছিল অনেকটা বেশি। চোখ লাগিয়ে আগ্রহ সহকারে দেখত নাচে গানে হাসি ঠাট্টায় ভরপুর দৃশ্য মাতিয়ে রাখত বায়োস্কোপ মালিকরা। এখন আর গ্রামে তেমন মেলা বসে না আবার এ পেশার সাথে জড়িতরা ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। যাও আছে তারা অধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বয়োবৃদ্ধদের নিকট থেকে জানা যায়, ৬০ দশক থেকে ৮০ দশক পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মেলা বসলেই দেখা যেত, বায়োস্কোপের কদর। বাবা-মায়ের কাছে মেলার প্রথম আবদার ছিল বায়োস্কোপ দেখার। বায়োস্কপে দেখা যেত সাদা কালো বাংলা ছবির চিত্র, ক্ষুদি রামের ফাঁসি, মুক্তিযুদ্ধের ছবি, গ্রাম বাংলার নব-বধুদের ছবি। “নব বধুদের ছবি আসলে বায়োস্কোপওয়ালা গেয়ে উঠত-“লাল পাইরের শাড়ি পড়ে গাঁয়ের বধু এলোরে”। বর্তমানের মানুষ যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি হারিয়ে গেছে গাঁও গেরামের ছবি। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এই ব্যবসার কদর আর নেই। মেলায় বসলেও অনেকে চেনেনা বায়োস্কোপ কি জিনিস। নব-প্রজন্ম হয়তো চিনবেনা বায়োস্কোপ কি জিনিস ছিল। কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে বায়োস্কোপ, শুধু মাত্র শুনবে বায়োস্কোপের গল্প।