
কুচক্রী ঘষেটি বেগমের কপালে কাফনের কাপড় তো দূরের কথা-মাটিও স্থান দেয়নি তাকে
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম: বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারী ঘষেটি বেগমের কপালের কাফনের কাপড় তো দূরের কথা- মাটিও স্থান দেয়নি তাকে। কে এই ঘষেটি বেগম? ঘষেটি বেগম হলো-সিরাজউদ্দেীলার নানা আলীবর্দী খাঁর ছিল তিন কন্যা ছিল। ক্রমানুসারে তাদের নাম ছিল মেহেরুন নেসা ওরফে ঘষেটি বেগম, মায়মুনা বেগম এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার মা আমেনা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান ঘষেটি বেগম স্বামীর অঘাত সম্পদের মালিক হন। নবাব তথা প্রসাশনের উপর প্রভাব বিস্তারের লোভে ঘষেটি বেগম চেয়ে ছিলেন সিরাজ নয় তার মেঝ বোন মায়মুনার পুত্র শওকত জং হোক বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব। কারণ শওকত প্রায় সারা দিনই মদ্যপান করতেন। আর চাটুকারদের কথামতো সিদ্ধান্ত নিতেন। তাই তার উপর প্রভাব বিস্তার করা সহজ হতো ঘষেটি বেগমের জন্য । তবে আলীবর্দী খাঁনের ইচ্ছায় তার মৃত্যুর পর নবাব সিরাজ উদ্দৌলা মসনদে আরোহণ করলেও ঘষেটি বেগম তা মেনে নিতে পারেননি। ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মসনদ থেকে যে কোন মূল্যে বিতাড়িত করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন ঘষেটি বেগম। এদিকে শওকত জং ক্রমান্বযয়ে নবাবের অবাধ্য হতে থাকেন। দিল্লির সম্রাট দ্বিতীয় আওরঙ্গজেবের প্ররোচনায় শওকত জং একপর্যায়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেন। তৎকালীন ২ কোটি রুপি ঘুষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সম্রাট দ্বিতীয় আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হওযার ফরমানও আদায় করে নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার তার বিশ্বস্ত ও সাহসী সেনানায়ক মহন লালের নেতৃত্বে একদল সৈন্য পাঠান পুর্নিয়ার রাজ্যের রাজা শওকত জং কে শায়েস্তা করার জন্য। পলাশী যুদ্ধের আট মাস আগে ১৬ অক্টোবর ১৭৫৬ সালে মহন লালের সৈন্যদের আক্রমনের মুখে শওকত জং মাতাল অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন এবং মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনা ঘষেটি বেগমকে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে এবং প্রতিহিংসার আগুন আরও বাড়িয়ে দেয়। এমটি এক প্রেক্ষাপটে লর্ড ক্লাইভ আর মীর জাফরের সংগে পলাশীর যুদ্ধে গোপন চক্রান্তে হাত মেলান ঘষেটি বেগম। প্রয়োজনে তিনি তার বিপুল সম্পদ খরচেরও প্রস্তাব করেন। আর এমই আশা করেছিলেন ক্লাইভ এবং মীর জাফর কালের বিবর্তনে যুদ্ধ এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মীর জাফর ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। এতে ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তারের যে স্বপ্ন ঘষেটি বেগম দেখেছিলেন তা কার্যত অপুর্ণ থেকে যায় ইংরেজদের আধিপত্যের কারণে। এক পর্যায়ে ঘষেটি বেগম দ্বন্দে জড়িয়ে পড়েন মীর জাফর এবং তার পুত্র মীরনের সংগে। পরিণতিতে ঘষেটি বেগমকে বন্দী করে পাঠিয়ে দেয়ে হয় ঢাকার (বর্তমান পুরান ঢাকায়) জিঞ্জিরা প্রাসাদে। এখানে বন্দী থাকা সত্বেও ঘষেটি বেগম নতুন চাপ শুরু করেন মীর জাফর এবং মিরনের বিরুদ্ধে । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এবং ভবিষ্যতে বিপদ হতে পারে ভেবে মীরন ঘষেটি বেগমকে বন্দী অবস্থায় নৌকা যোগে মুর্শিদাবাদে ফেরত পাঠানোর আদেশ দেন। নৌকায় ঘষেটি বেগমকে নিয়ে জিঞ্জিরা প্রাসাদ ছেড়ে গেলেও মুর্শিদাবাদে পৌছেনি কোন দিনও। পথেই নৌকাডুবিতে ঘষেটি বেগমের সলিল সমাধি ঘটে বলে ধারণা করা হয়। মেহেরুন্নসা বেগম হলেও ইতিহাসে কুচক্রী নারীর প্রতীক হিসেবে ঠাই পেয়েছেন ঘষেটি বেগম নামে, যা ছিল তার ডাক নাম। বাংলা-বিহার-উড়িয়ে মাটিও ঠাই দেয়নি কুচক্রী ঘষেটি বেগমকে। সাড়ে তিন হাত মাটিও জোটেনি এ বিশ্বাসঘাতকিনীর কপালে। অঢেল-সম্পদ তার কোন কাজেই আসেনি।