
নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্বাধীনতা রক্ষা এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে কাজ করার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রাখবেন জাতির পিতার দীর্ঘ ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, যা আমাদেরকে এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আপনাদের পূর্বসূরীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সকল আঘাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২২’ উদ্বোধনকালে দেয়া প্রধান অতিথির ভাষণে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের প্রতি এ আহবান জানান। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজবারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস জনবান্ধব পুলিশিং এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, গণতন্ত্র সমুন্বত রাখতে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। সর্বোপরি পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ পুলিশকে শান্তির সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে নব উদ্যমে কাজ করতে প্রেরণা জোগাবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে পূর্বসূরীদের ঐতিহ্য ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যও পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই, তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়।
বিএনপি’র ধংসাত্মক কর্মকান্ড স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, বৃক্ষ কর্তন, রাস্তা কেটে ফেলা- নানান ধরনের কাজ তারা করেছে, এমনকি পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে। যেভাবে পুলিশের সদস্যদের তারা নির্মমভাবে মেরেছে সেটা সত্যিই ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে তারা দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছে তার কোন সীমা নেই।
তিনি সে সময় সহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকবেলায় পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।তিনি বলেন, সেই সময় পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিয়ে এসেছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তারা কাজ করেছেন।এ জন্য সবাইকে তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাহস ও বিরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সার্ভিসের কৃতি সদস্যদের পুলিশ পদক দেন। রাজারবাগে ঢাকা মহানগর পুলিশ লাইনসে এ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নেন।
প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশ পুলিশ পদক তুলে দেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার এবং মরণোত্তর কর্মকর্তাদের পরিবারের হাতে।
মরনোত্তর পদকপ্রাপ্তরা হলেন, মোহাম্মদ সাঈদ তারিকুল হাসান (এআইজি অপারেশন্স, পুলিশ সদর দফতর), এসআই মো. মাহবুবুর রহমান (হাইওয়ে পুলিশ, কুমিল্লা), করপোরাল শাহিদুজ্জামান (র্যাব ৫), কনস্টেবল মো. মাসুদ রানা (হাইওয়ে পুলিশ, বগুড়া রিজিওন), সার্জেন্ট মো. খাইরুল ইসলাম (র্যাব-৪), কনস্টেবল মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম (ট্রাফিক উত্তর বিভাগ, সিএমপি), কনস্টেবল কবির হোসেন (গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি, মুন্সিগঞ্জ), কনস্টেবল মোহাম্মদ ইদ্রিস মোল্লা (র্যাব-১) এবং কনস্টেবল মোহাম্মদ রাব্বি ভূঁইয়া (হাইওয়ে পুলিশ, কুমিল্লা রিজিওন)।
এছাড়াও পদক পেয়েছেন, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (অতিরিক্ত আইজিপি, র্যাবের মহাপরিচালক), খন্দকার লুৎফুল কবির (ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার গাজীপুর), ফয়সাল মাহমুদ (উপ-পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক বিভাগ, সিলেট), এসআই মোহাম্মদ রাফি (জেলা গোয়েন্দা, মুন্সিগঞ্জ), কনস্টেবল পপি আক্তার (জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯), কনস্টেবল সাঈদ চৌধুরী (গোয়েন্দা শাখা, ময়মনসিংহ), কনস্টেবল হাফিজুর রহমান (৫ এপিবিএন, উত্তরা, ঢাকা) এবং সৈনিক মো. ইমরান হোসেন (র্যাব-১৫, কক্সবাজার)।
করোনা সংক্রমণের কারণে গেল বছর পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয়নি। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্যকে পদক দেওয়া হবে। পদকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম) সেবা।