
গুম অপহরণ নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে গুম, অপহরণ, অবৈধভাবে আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যা দেশে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই বলে মনে করে বিএনপি।
বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের শত শত মানুষকে অবৈধভাবে আটক ও অনেককে গোপন স্থানে আটকে রেখেছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে দলটির পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রতিক্রিয়া জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আইন- শৃঙ্খলা বাহিনী দেশের শত শত মানুষকে অবৈধভাবে আটক করেছে এবং গোপন স্থানে আটকে রেখেছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যাদের অধিকাংশই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবার তাদের স্বজনদের লাপাত্তা করার জন্য বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের কাউকে কাউকে বেশ কিছুদিন পর ফেরত দেয়া হয়েছে। অন্যরা এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, এ প্রাণবিনাশী অপতৎপরতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগও গ্রহণ করে না পুলিশ।
রক্ত হিম করা এসব গুম, খুন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারকে তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষের বেঁচে থাকা, নিরাপদে জীবন-যাপন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।
রিজভী আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের মানুষকে এখন বিষাক্ত কাঁটার খাঁচার মধ্যে বন্দি করে রেখেছে। দেশের প্রতিটি জনপদে, বাড়িতে বাড়িতে মৃত্যু, গুম, অপহরণ, নিখোঁজ ও বিনা বিচারে আটকের ভয় নিয়ে গভীর আশঙ্কায় মানুষ দিনাতিপাত করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গুম, অপহরণ, অবৈধভাবে আটক, বিচার বহির্ভূত হত্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুঃশাসনের বিষাক্ত ছোবলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, মানবাধিকার কর্মী, শ্রমিক নেতা,পেশাজীবিসহ সাধারণ মানুষ গুম হচ্ছে, অদৃশ্য হয়ে গেছে অন্ধকারের অতলে অথবা গোপন স্থানে বছরের পর বছর আটকে রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে কিছুদিন পর কারও কারও লাশ মিলেছে খালে-বিলে-নালা-ডোবায় কিংবা রাস্তার ধারে। আর অন্যদের ভাগ্যে কী জুটেছে সেটি এখনও অজানা।
বিএনপির এই নেতা বলেন,সম্প্রতি রাষ্ট্রের রক্ততৃষ্ণা মেটাতে আরেকজন শিকার হচ্ছিলেন। তিনি দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক,প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার।
এ ঘটনায় এখন গোটা জাতি মানসিকভাবে আহত । এই ট্রমা শুধু ফরহাদ মজহারকেই আক্রান্ত করেনি, সারা দেশবাসীকেই করেছে।
ফরহাদ মজহার অপহরণকে নিছক সন্ত্রাসীদের অপহরণ বলে চালানোর অপচেষ্টা করে সরকার ও দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে সমস্ত অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তা বলেছে তা নাটকের যবনিকার অন্তরালে প্রকৃত ঘটনা ক্রমাগতভাবে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে।
রিজভী বলেন, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে দলের নেতাকর্মীদের উপদ্রুত এলাকায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুর্গত এলাকার মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। প্রধানমন্ত্রী যদিও বুধবার বলেছেন, বানভাসীদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। বাস্তবে বানভাসী মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।
কোনো কোনো এলাকায় খাদ্য, পানি বা চাল না দিয়ে খাওয়ার অনুপযোগী সামান্য কিছু গম দিচ্ছে যে গম প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শুকাতে কিংবা আটা করেও খেতে পারছে না। এটা ত্রাণের নামে বিপদগ্রস্ত বানভাসী মানুষকে উপহাস করা। আসলে লুটপাটের কারণে রাষ্ট্রীয় খাদ্যভাণ্ডারগুলো এখন যে শূণ্য তা প্রমাণিত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মাহবুবুল হক নান্নু, খোন্দকার মাশুকুর রহমান, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান, হারুনুর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।