
গোপালপুরে গলায় ব্লেড চালিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তির আত্মহত্যা
কে এম মিঠু, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের গোপালপুরে মাদকের জন্য নিজের গলায় নিজেই ব্লেড চালিয়ে আত্মহত্যা করেছে রেজাউল করিম রনজু (২৫) নামে এক মাদকাসক্ত তরুণ।
মাদকাসক্ত রনজু গোপালপুর পৌরশহরের ডুবাইল মধ্যপাড়া গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের সন্তান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রনজু সবার ছোট। সাত-আট বছর আগে এলাকার কিছু খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে সে নেশার জগতে পা বাড়ায়। প্রথমে পরিবার থেকে কিছু বুঝতে না পারলেও অনেক রাত্রি করে বাড়ি ফেরা, টাকার জন্য বাড়ি-ঘরের জিনিসপত্র ভাংচুর এবং তার বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে বুঝতে পারে রনজু মাদকের জগতে পা বাড়িয়েছে। পরে আপনজনদের পরামর্শে তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসায় পাঠিয়ে কিছুটা ভালো করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। বাড়িতে কিছু দিন স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করলেও আবার সে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে আবারও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা করানো হয়। এভাবে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তাকে চিকিৎসা করানো হয়। এদিকে ওর পিছে চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয় বাবদ প্রচুর টাকাপয়সা খরচ হওয়ায় পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থায় ভাটা পরলে নানা জ¦ালাতন ও অশান্তি সহ্য করেও রনজুকে বাড়িতেই রাখা হয় এবং ঔষধপত্র খেতে না চাইলেও মাঝেমধ্যে চিকিৎসা দেয়া হয়। মনমর্জি মতো সে কিছুদিন যাবত নিকটস্থ ডুবাইল বাজারের এক টেইলার্সে দর্জির কাজও শুরু করে।
একটানা তিন দিন সে না ঘুমিয়ে পাগলাটে ভাবে কথাবার্তা এবং সারারাত ঘরের ভিতর পায়চারি করার পর গতকাল বুধবার সে সেলুনে সেভ হবে বলে এক’শ টাকার বায়না ধরে। টাকা দিতে একটু দেরি হওয়ায় সে ফাঁসি দিবে বলে প্রলাপ বকতে থাকে এবং দড়ি-রশি খুজে না পেয়ে তার বাবার মাফলার দিয়ে ঘরের ভিতর ফাঁসি দিতে যায়। পরে তার মা এক’শ টাকা রনজুর হাতে দিলে শান্ত হয় এবং সকালের খাবার খেয়ে বাজারের উদেশ্যে বের হয়। বাড়ির পাশেই এক দোকান থেকে সে এক’শ টাকা ভাঙ্গিয়ে বিস্কুট ও সিগারেট কিনে খায় বলেও তার পরিবার জানায়।
দুপুর আনুমানিক দুইটার দিকে রনজুর বাড়িতে খবর আসে, তাদের বাড়ি থেকে আট-দশটি বাড়ির পরেই এক পুকুর পারে রনজু কান্নাকাটি করছে। পরিবারের লোকজন গিয়ে দেখে, রনজুর সারা শরীরে রক্ত এবং গলা কাটা। দ্রুত তাকে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে গোপালপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে একটি ব্লেড জব্দ ও লাশের প্রাথমিক সুরতহাল করে লাশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) রামানন্দ সরকার জানান, অনেকেই বলাবলি করছে আত্মহত্যাকারী তরুণ একজন মাদকাসক্ত ও মেন্টাল ডিজিসে আক্রান্ত হয়ে নিজেই আত্মহত্যা করেছে। তবে আইনানুযায়ী হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ জানতে অবশ্যই লাশের ময়নাতদন্ত লাগবে, তাই ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।