
ঘাটাইলে কমসৃজন প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ!
রেজাউল করিম খান রাজু, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে কর্মসৃজন কর্মসূচিতে চলছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি। আর এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। আবার কোনো কোনো ইউপি চেয়ারম্যান একঘেয়েমিপনা ও দুর্নীতির কারণে খোদ ইউপি সদস্যরাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। কোনো কোনো চেয়ারম্যানের দুর্নীতি কারণে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ওই দুর্নীতির টাকা ভাগবাটোয়ারা করে আপসরফার মাধ্যমে অভিযোগ প্রত্যাহার করার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ঘাটাইলের দেওপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মসৃজনে ৪০ জন শ্রমিকের স্থলে ৫-৭ জন কাজ করতে দেখা যায়। এ রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে কালিকাপুর বাছেদের দোকান থেকে দেওপাড়া বিট অফিস হয়ে বিট অফিসের দক্ষিণ পাশে পাকা রাস্তা পর্যন্ত পুনঃনির্মাণ। প্রকল্পের সভাপতি দেয়া হয়েছে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মালেকাকে। কাগজে-কলমে তাকে সভাপতি রাখা হলেও সব কাজ চেয়ারম্যানের নাতি সোহান তালুকদার ও আনোয়ার হোসেন নামে অন্যকে দিয়ে করানো হয়। ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার কামাল হোসেন জানান, চেয়ারম্যান কোনো মেম্বারের সঙ্গে সমন্বয় না করে ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছেন। এ নিয়ে বারবার বললেও তিনি কোনো কিছু ভ্রƒক্ষেপ করছেন না। ১নং ওয়ার্ড মেম্বার বেলায়েত হোসেন বলেন, তাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হলেও তার নামে টাকা উত্তোলন করে ৮৫ হাজার টাকা চেয়ারম্যান নিজেই নিয়ে নেন। এদিকে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের কাছে জবকার্ড থাকার কথা থাকলেও সব কাগজপত্র রাখা হয়। চেয়ারম্যানের সুজনদের কাছে। আর তারাই সব কাজ করে থাকে। ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ওসমান গনি জানান, চেয়ারম্যান কোনো কাজও দেন না, পরামর্শও করেন না। তার ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছেন। এতে ব্যাপকভাবে দুর্নীতি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই অভিযোগ ইউপি সদস্য লতিফা ডেইজি সালাম ও তয়ৈম উদ্দিনের।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মইন উদ্দিন তালুকদার বলেন, ইউপি মেম্বারদের সঙ্গে যে দূরত্ব ছিল তা মীমাংসা হয়ে গেছে এখন আর কোনো ঝামেলা নেই। এভাবে লোকেরপাড়া ইউনিয়ন ঘুরে একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। কর্মসৃজন প্রকল্পগুলোতে কাজের চেয়ে হরিলুট হচ্ছে বেশি। লোকেরপাড়া ইউনিয়নে বকশিয়া কাঁঠালতলা থেকে বাছেদ মেম্বারের বাড়ি হয়ে ছয়আনী বকশিয়া পাকারাস্তা পর্যন্ত সংস্কার প্রকল্পে ৬০ জন শ্রমিকের স্থলে ১২ জনের উপস্থিতি দেখা যায়। এ প্রকল্পের সর্দার রসুল মামুদ বলেন, আজ ১২ জন শ্রমিক কাজ করছে। এর আগের দিন ৩২ জন কাজ করেছে বলে জানায়। ইউনিয়নের সব কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিক না খাটিয়ে বিল উত্তোলন করা হয় বলে জানা যায়।
দিঘলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সব কাজ তো আমিই করব। অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, যারা মিথ্যা অভিযোগ করেছিল তারাই আবার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, গ্রামীণ অবকাঠামো বাস্তবায়নে নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে চলছে চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের চরম নৈরাজ্য। এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এনামুল হক বলেন, ঘাটাইলে বিস্তীর্ণ এলাকা ছাড়াও আরও একটি উপজেলা দায়িত্বে থাকায় ঘাটাইলে সব প্রকল্প একা দেখা সম্ভব হয় না।