
ঘুষ ছাড়া চাকরি পেলে সংবর্ধনা: সিপিবি সভাপতি
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশে চাকরির জন্য প্রত্যেককেই ঘুষ দিতে হয় মন্তব্য করে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছেন এমন কাউকে পাওয়া গেলে তাকে সংবর্ধনা দেবেন তিনি।
বৃহস্পতিবার এক সমাবেশে সিপিবি সভাপতি বলেন, “এমএ পাস, বিএ পাস, মেট্রিক পাস কিংবা শিক্ষাবঞ্চিত সাধারণ নাগরিক হোক, বড় অফিসার থেকে শুরু করে পিয়নের চাকরি হোক, ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছে- এই রকম লোকের খোঁজ পেলে আমার কাছে নিয়ে আসবেন, আমি এই প্রেসক্লাবের সামনে তার ছবি সাঁটিয়ে রেখে দেব, যাতে দেশের ১৬ কোটি মানুষ দেখতে পারে।”
তবে ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছেন এমন লোক এখন খুঁজে পাওয়া যাবে না বলেই এ বাম নেতার বিশ্বাস। ঘুষ ছাড়া চাকরির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যুব ইউনিয়নের ওই সমাবেশে প্রধান অতিথির ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, “ঘুষ দেওয়া ছাড়া চাকরি পাওয়া যায় না সে কথা আমরা বলছি। কিন্তু ঘুষ দিলেও চাকরি পাওয়া যায় না। ঘুষের ভিতরে নাকি এখন দুর্নীতি ঢুকে গেছে, এই রকম একটা অবস্থার ভেতরে আজকে চলে গেছি। এর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে, একে একটা ভাঁওতা দিয়ে ওকে একটা ভাঁওতা দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।”
উদাহরণ দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নাম ‘বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের’ এক তালিকায় আসার প্রসঙ্গ টানেন সিপিবি সভাপতি। তিনি বলেন, “দরবেশ সাহেব এক সময়ে শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা ছিল, তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। যার জায়গা হওয়ার কথা ছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে, তাকে আজকে উপদেষ্টা বানিয়ে রেখেছে।”
চাকরিতে ঘুষের এই ‘ন্যক্কারজনক’ অবস্থা কেবল ‘পাকিস্তান আমলে’ ছিল মন্তব্য করে সেলিম বলেন, “তখন আমরা লড়াই করেছিলাম, অন্যায় এবং বেইনসাফ থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের দাবি ছিল ঘুষ-দুর্নীতি নিপাত যাক। আইয়ুব খান ও মোনায়েন খান যুব সমাজকে সংকীর্ণ স্বার্থবোধে আটকে রাখত। সেটাকে রুখে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম।”
কিন্তু স্বাধীন দেশে ঘুষ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মন্তব্য করে সিপিবি সভাপতি বলেন, “স্বাস্থ্য সংক্রামক না, রোগ সংক্রামক হয়। একজনের একটা অসুখ হলে সেটা ছড়িয়ে পড়ে। মাথার উপরে রোগ ধরেছে সেটা ছড়িয়ে পড়েছে।”
চাকরিসহ সবক্ষেত্রে সবার সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব সরকার আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। অধিকার যেন বাস্তবায়ন হয় সেজন্য সব কিছু করতে হবে।” ঘুষ ছাড়া চাকরির দাবির পাশাপাশি বদলি পদোন্নতিতে ঘুষ এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। একটি জেলার এক কর্মকর্তা ১৭ লাখ টাকা দিয়ে বদলি হয়েছেন- এমন ঘটনার তথ্য তুলে ধরে বদিউল আলম বলেন, “বদলির জন্য যদি ১৭ লাখ টাকা দিতে হয়, তাহলে তিনি চাকরি কী জন্য করবেন? সেই টাকা তোলার জন্য? নিজের জন্য? না জনগণের জন্য?”
যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেলের সভাপতিত্বে সমাবেশে সঞ্চালনায় দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াদ।
সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি দিতে একটি মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু শিশুপার্কের কাছে পুলিশ তাদের আটকে দিলে একটি প্রতিনিধি দল গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন।
sa1