
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ধেয়ে আসছে, ১০নম্বর মহাবিপদ সংকেত
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম: ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে। সোমবার বিকালে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে নিম্নাঞ্চলের ৫০টি গ্রাম স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ফলে আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং করে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। মেডিকেল টিম গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিকাল থেকে সারাদেশে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রেখেছে বিআইডব্লিউটিএ। চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে সকাল থেকেই। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারির পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে সবধরনের বিমান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। খুলে দেয়া হয়েছে উপকূলের সবকটি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। উপকূলীয় এলাকা আনোয়ারা, বাঁশখালীর নিম্নাঞ্চল থেকে সব মানুষজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে কোস্টগার্ড।
কোস্টগার্ডের চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের কমান্ডার শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যথাসম্ভব উপকূল থেকে সব মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কোস্টগার্ড ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে।’ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরসহ তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোরা আরও সামান্য উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, উপকূলীয় ১৯ জেলার মধ্যে দশটি জেলাকে তারা সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত এসব জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষকে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে পেরেছেন এবং প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে। এই ঝড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন।
প্রায় ২০০ কিলোমিটার ব্যসের এই ঘূর্ণিঝড় সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূলের ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরের জন্য ১০ নম্বর এবং পায়রা ও মোংলা বন্দরের জন্য ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করে আবহওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরেরর পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার শক্তির ঝড়ো হাওয়া নিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোরা মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় দুপুরে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে সন্ধ্যার মধ্যে ঝূঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার নির্দেশ দেয়। জেলায় জেলায় মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয় সে সময় থেকেই।
কিন্তু তখন সংকেত কম থাকায় এবং আবহাওয়া ততটা প্রতিকূল না হওয়ায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখাননি বলে আমাদের জেলা প্রতিনিধিরা জানান। সন্ধ্যায় মহাবিপদ সংকেত জারি হলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেন। রাত ৮টার পর স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতায় বসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ আর গতি পায়।