
চাঁদা বাড়ল আওয়ামী লীগে
নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মাসিক চাঁদার হার বাড়ানো হয়েছে। নতুন হারে নির্ধারণ করা চাঁদা ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে ধরা হবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য করায় সাভারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকম-লীর বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা খবরটি নিশ্চিত করেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিম-লীর সদস্যদের মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। একই পরিমাণ চাঁদা ধরা হয় দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরও। আগে এই ফোরামের চাঁদার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার টাকা। সম্পাদকম-লীর সদস্যদের চাঁদার হার বাড়িয়ে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। সদস্যদের চাঁদার অংশ ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্যদের মাসিক চাঁদা ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ করা হয়েছে। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের চাঁদার হার পূর্বনির্ধারিত ২ হাজার ১০০ টাকাই বহাল রয়েছে। উপদেষ্টাদের চাঁদার হার বাড়ানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদার হার বাড়ানো হয়েছে। বৈঠকে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, আমাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে বিগত এক মাস ধরেই অডিট টিমসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আজ (রবিবার) রাতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করব। এরপর সোমবার সকালে নির্বাচন কমিশনে দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়া হবে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, সাভারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমানের বিষয়েও আলোচনা ওঠে। তার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করার দায়িত্ব নেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে বৈঠক থেকে বেরিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বলেন, তিনি একটি পত্রিকায় ইন্টারভিউ এবং রিঅ্যাকশন দিয়েছিলেন। সেটা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছি পার্টিতে এবং তাকে এ বিষয়ে শোকজ করছি।
সাভারের বর্তমান এমপি ডা. এনামুর রহমান নির্বাচনী এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সাভারে অনেক ক্যাডার আর মস্তান ছিল। এখন সব পানি হয়ে গেছে। কারো টুঁ শব্দ করার সাহস নেই। ৫ জনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছি, আরও ১৪ জনের লিস্ট করেছি। সব ঠা-া। লিস্ট করার পর যে দু-একজন ছিল তারা আমার পা ধরে বলেছে, আমাকে জানে মাইরেন না আমরা ভালো হয়ে যাব।’
এ ছাড়া বগুড়ায় শহর শ্রমিক লীগ নেতার হাতে এক কিশোরী নির্যাতনের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সহযোগী সংগঠনের ব্যাপারে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারি না। তারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা নির্দেশ দিয়েছি। আওয়ামী লীগের ওই বৈঠকের পর পরই বগুড়ার ওই শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কাদের আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন মিশন নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগ যৌথ উদ্যোগে জোরালোভাবে খোঁজখবর নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর স্ত্রী রিজিয়া নদভীর বাবা জামায়াত নেতা হলেও তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়েছেন। নদভী ও নদভীর স্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে ইতোমধ্যে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, রিজিয়া মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা নেই। তবে সামাজিকভাবে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ আছে। কারণ এখানে প্রশ্ন হলো যিনি আওয়ামী লীগের এমপি, তিনি আজ প্রায় চার বছর ধরে আওয়ামী লীগের এমপি। এই চার বছর কিন্তু তাকে নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তার স্ত্রী যদি জামায়াত নেতার সন্তান হন, তা হলে চার বছর ধরে তো এই সন্তানের স্বামী হচ্ছে এমপি। এই এমপিকে নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি এবং তার (রিজিয়া) বিষয়ে কেউ কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করেনি। এখন সে (রিজিয়া) প্রশ্ন করছে, তা হলে কি আমার সন্তানের আওয়ামী লীগ করার অধিকার থাকবে না? তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে সে আওয়ামী লীগ করতে পারবে না? তার বাবার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। এই অবস্থাকে আপনি বলবেন?
কাদের আরও বলেন, রিজিয়া যার স্ত্রী তিনি তো আমাদের এমপি। এখন এমপি সাহেব আসছেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আমি তার স্ত্রীকে বাদ দিয়ে ছবি তুলব! বলব, আপনি সরে যান। আরেক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, রিজিয়া জামায়াতের কোনো কর্মী নয়। সে আওয়ামী লীগের কাজ করছে। রিজিয়া জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার সদস্য ছিল এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, সে তো বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল না।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকম-লীর সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অসীম কুমার উকিল, ড. হাছান মাহমুদ, এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।