
চৌহালীতে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ডাকাত আতংক
জেলায় ৬০ হাজার মানুষ পানি বন্দী
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় সন্ধ্যা হলেই ডাকাত দলের প্রবনতা বেড়েই চলেছে। শনিবার এলাকারবাসীরা জানায়, সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ডাকাত দল স্যালো মেশিনের নৌকা নিয়ে ডাকাতির করার জন্য ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় প্রবেশ করে গৃহপালিত গবাদি পশু সহ নগদ অর্থ সহ খাদ্য দ্রব্যগুলো নিয়ে যাচ্ছে। ডাকাত দলের হাত থেতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহিলারা বাড়িতে সারা রাত্রি জেগে থাকে এবং পুরুষ লোকেরা সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা গুলোতে রাতভর গ্রামবাসী মিলে দল বেঁেধ পাহাড়া দিচ্ছে।
ভাঙ্গন কবলিত মানুষের ভাষ্য যমুনা বড়ই সর্বনাশা। কখনও উত্তাল আবারও কখনও শান্ত-এই আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে গৃহহীন পরিবার গুলো। যমুনার পানি ক্রমাগত ভাবে বৃদ্ধি এবং যমুনার ভাঙ্গণে নিজ বসত ভিটা-মাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে হাজারও পবিবারকে এবং পানি বন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় যমুনা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার সদর উপজেলার ১০টি, শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি, চৌহালী উপজেলার ৭টি, বেলকুচি উপজেলার ৩টি এবং কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নসহ মোট ৪৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেইসাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙ্গন। জেলার কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় ৩শতাধিক ঘরবাড়ি ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কারনে নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভাঙ্গন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের অভিযোগ সন্ধ্যা হলেই ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা পাহাড়া দিচ্ছি অথচ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা তো দুরে কথা কোন টহল পর্যন্ত নেই।
এ ব্যাপারে চোহালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আকরাম হোসেন ও এনায়েতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, চৌহালী থানার পুলিশ এবং এনায়েতপুর থানা পুলিশ নিয়মিত ভাবে নৌকা যোগে টহল দিচ্ছে এবং যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তার জন্য আমাদের সার্বিক ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শাহজাদপুরে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় উপজেলার সোনাতুনি ইউনিয়নে যমুনা নদীর ভাঙ্গণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত ৭ দিনের ভাঙ্গণে এ ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের কমপক্ষে ২ শতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ৫০০ বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। গ্রাম গুলি হল, ধীতপুর, শ্রীপুর, সোনাতুনি, বানতিয়ার, বড় চানতারা, ছোট চানতারা, মাকড়া ও কুরসি। ফলে এ সব গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা মাথা গোজার ঠাই হাড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। অনেকে আতœীয় স্বজন ও পাশর্^বর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে আবার সব হারিয়ে বেচে থাকার তাগিদে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। এ ব্যাপারে বানতিয়ার বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, কুরসি গ্রামের নুরুল ইসলাম, ধীতপুর গ্রামের শামছুল ইসলাম জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ার পর থেকেই এ ইউনিয়নের এ সব গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। সরকারী ভাবে এ ভাঙ্গণ রোধে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ ভাঙ্গণের কবলে পড়ে ধীতপুর বাজার ও শ্রীপুর বাজার বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বাজার দু‘টির সিকি ভাগ বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়া হলে এ দু‘টি বাজার যে কোন মূহুর্তে অস্তিত্ব হারাবে। তারা আরো জানায় এখনও পর্যন্ত ভাঙ্গণ কবলিত এলাকায় সরকারী কোন সাহায্য সহযোগীতা মেলেনি। এমন কি ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কোন খোজ খবরও নেয়নি। ফলে তারা সর্বস্ব হারিছে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলীমুন রাজীব বলেন, সোনাতুনি ইউপি চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেটি হাতে পেলে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সোনাতুনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ভাঙ্গণে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ২/৩ দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এরপর সরকারী বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তা বিতরণ করা হবে। এ দিকে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের ১০ হাজার বিঘা গোচারণ ভূমি ও শতাধিক গরুর বাথান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ফলে গো-খামারীরা তাদের শত শত গবাদি পশু বাথান এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এ সব গরু এখন খামারীদের বাড়ির আঙ্গীনা ও গোয়াল ঘরে বন্দিদশায় রয়েছে। ফলে উন্নত জাতের এ সব গরুর কাঁচা ঘাসের অভাবে দুগ্ধ উৎপাদন কমে গেছে। অপর দিকে বাজারে খইল ভুষি ও দানাদার খাদ্যের দাম বস্তা প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারীরা চরম বিপাকে পড়েছে।