
টাঙ্গাইলে তিনদিনব্যাপি জামাইমেলা শেষ হচ্ছে আজ
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা: কালিহাতী-টাঙ্গাইল এর সংযোগস্থল রসুলপুরে তিনদিনব্যাপি জামাইমেলা উৎসব মূখর পরিবেশে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হতে চলেছে। যুগ যুগ ধরে সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে প্রতি বছর বাংলা বর্ষের ১১ বৈশাখ নির্ধারিত দিনটিতে শুরু হয় বাঙালির প্রাণের এ মেলা। মেলা চলে তিন দিন ব্যাপি।
প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইল-কালিহাতীর সংযোগস্থল রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কালিহাতী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ৩০ থেকে ৪০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জামাইমেলা নাম হলো কেন? এর উত্তরে রসুলপুরের অনেকেই বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের বর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন, তারাই মেলার মূল আকর্ষণ এ কারণেই মেলাটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মেলা ঘনিয়ে আসলেই এলাকায় ঘরে ঘরে খোঁজ পরে জামাই-মেয়েদের। শশুড়-শাশুড়ীরা তাদের নিজ নিজ মেয়ের জামাইদের দাওয়াত করেন। জামাই এসে তাদের শ্যালক-শ্যালিকা নিয়ে এ মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। জামাই মেলায় এলাকায় একটি বিশেষ দিন হিসেবে পরিচিত। এ অনুষ্ঠানে সকল আত্মীয়-স্বজন একত্রিত হওয়ায় এলাকা থাকে মুখরিত।
সরেজমিনে পরিলক্ষিত হয়, বিভিন্ন দোকানীরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আসে, আর ক্রেতারা তা কিনছেন। বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলে মেয়ারা এই মেলা বেশি উপভোগ করছেন। আবারা অনেকেই মেলার দোকান সাজানোর কাজ করছেন। এ ব্যাপারে গৌর চন্দ্র ঘোষ নামের এক শিক্ষক জানান, এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এ মেলা ঈদ আর পূজাপার্বন অপেক্ষ বেশি উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত।
মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সাথে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন। এক মাস থেকে এই মেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়। লোকজন ছুটি নিয়ে মেলা দেখার জন্য আসেন। আগে বয়স্ক লোকজন এই মেলা উপভোগ করতো। এখন মধ্যবয়স্ক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এই মেলা বেশী উপভোগ করনে। মেলায় মিষ্টি জাতীয় জিনিস বেশী বিক্রি হয়।
জামাল হোসেন নামে রসুলপুরের এক জামাই বলেন, আমি স্বাধীনতার আগে বিয়ে করেছি। প্রতি বছরই আসি মেলায়। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বেঁচে থাকতে তারা আগে থেকেই দাওয়াত দিতেন। এখন তারা বেঁচে নেই। শ্যালক-শ্যালকের বউ এখন দাওয়াত দেয়। মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা বিনোদন ব্যবস্থার। মেলায় থাকে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসেছেন ব্যবসায়ীরা।
রসুলপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নবপ্রজন্ম সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মারুফ আহমেদ বলেন, আমাদের এই মেলা ঐতিয্যে পরিণত হয়েছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে দারুণ একটা প্রাণচাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। তবে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎসবের আমেজ কিছুটা কম। তারপরও আশা করছি আজ তো প্রথম দিন, আবহাওয়া ভালো হলে মেলা জমে উঠেবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। এ কাজ করে আমরা প্রচুর আনন্দ পাই।
মেলার আহবায়ক আতোয়ার রহমান বলেন, আমাদের এ মেলায় প্রায় শতাধীক দোকান বসেছে। প্রায় ১৫০ জন স্বেচ্ছায় মেলায় দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এই মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্য ঐতিয্যবাহী মেলা। এই মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। আমি ছোট বেলা থেকে এই মেলা দেখে আসছি। এই মেলার লাভের টাকা বিভিন্ন উন্নয়ন মূলককাজে জন্য দেয়া হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। মেলার নিরাপত্তার জন্য মেলার চতুর্দিকে সার্বক্ষণিক বলেন্টিয়ার কাজ করে থাকে।