
ক্ষেত থেকে পাকা ধান সংগ্রহ করতে ব্যস্ত কৃষকরা
টাঙ্গাইলে বোরো কাটার ধুম ॥ বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা কৃষকদের
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলে সর্বত্র এখন বোরো ধান কাটার ধুম। কৃষকরা ক্ষেত থেকে পাকা ধান সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। তবে বাজারে ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ তারা। তাদের অভিযোগ চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যন্ত যে খরচ হয়, সেই তুলনায় বাজারে ধানের দাম পাওয়া যায় না। তবে টাঙ্গাইলে এবার ঝড়-বৃষ্টি হলেও ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকরা মনে করেন।
সরেজমিনে টাঙ্গাইলের বৈল্লা, এনায়েতপুর, গালা ও মাগুরাটায়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার চাষীরা এবং রোজগেরে কামলারা ধান কাটছেন। অনেকেই আবার ধান কেটেও ফেলেছেন। কারও কারও ধান কাটা এখনো শুরু হয়নি। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে।
মাগুরাটা গ্রামের কৃষক কুরবান আলীর সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ৪ বিঘা জমিতে ২৯ জাতের ধান লাগিয়েছি। ধানে তেমন পোকামাকড় না হওয়ায় বাম্পার ফলন হবে। টাঙ্গাইলে ঝড়-বৃষ্টিতে ধানের তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। তবে বর্তমানে বাজারে ধানের দাম কম। এখন বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু একটি কামলার দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। তার মানে ধানের থেকে কামলার দামই বেশি।
তিনি আরো বলেন, আগের মতো আমরা ধান কাটতে মজা পাই না। আগে ধান কাটার পর প্রতিটি ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব হতো। কিন্তু আধুনিকার সাথে সাথে এখন আর তেমন নবান্নের উৎসব হয় না।
গালা বাজারের কৃষক শাহ আলম বলেন, আমি এবার ৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছি। এখন আমি কামলা দিয়ে ধান কাটাছি। এতে আমার প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার ধানের আবাদ গত বছরের থেকে ভালো।
কথা হয় সেচ পাম্পের এক মালিক মানিক মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমি ধানের জমিতে পানি দিয়ে ৪ ভাগের এক ভাগ ধান নেই। কয়েক দফায় বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। ফলে আমার এখানেও বিদ্যুতের বিলও বেড়ে গেছে। বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় এখন ধান নিয়ে আমাদের পোষায় না। তবে আমাদের এখানে ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
কথা হয় নাটোর থেকে আসা ৮ সদস্যেদর কামালার দলনেতা মকদম আলীর সাথে। তিনি বলেন, আমাদের ওইখানে ধান কাটা শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা টাঙ্গাইলে ধান কাটার জন্য এসেছি। প্রতিদিন আমারা ৫০০ তেকে ৫৫০ টাকা পাই। আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান কেটে থাকি। ধান কেটে আমরা লাভবান হই। সংসারের যাবতীয় খরচ এর উপর নিভরশীল।
কথা হয় শেরপুর থেকে আসা আরেক কামলা রহমত আলীর সাথে। তিনি বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে দেশের ভিন্ন স্থানে ধান কাটছি। আমরা দলবদ্ধভাবে ধান কেটে থাকি। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান কাটতে আমাদের কোন সমস্যা হয় না।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত তিনটি স্থানে ধান কেটেছি, এখনও ধান কাটছি। ধান কেটে আমরা বেশ লাভবান হই।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে (২০১৬-১৭) টাঙ্গাইলের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬২ হেক্টর, আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৪৫ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ৬ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ মেট্রিন টন।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আবু আদনান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে জেলায় এবার বাম্পার ফলন বলে মনে করছি। ঝড় বৃষ্টি কিংবা হাওরের বন্যায় টাঙ্গাইল জেলায় ধানের কোন ক্ষতি হয়নি। আমরা বিভিন্ন সময় কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস পালন করেছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকি। কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে আমাদের ৩৫৭ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন।