
দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ, ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি
জাগ্রতবাংলা প্রতিবেদক : পানি আসার শুরুতেই প্রমত্তা যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলী এলাকায় নদী ভাঙণে প্রায় ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
সরেজমিনে, সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নটি ১৯৫৭ সালে হুগড়ার সাথে সেপারেশন হয়ে নতুন করে কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নামে পরিচিত পায়। বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়াতে পূর্ব এবং দক্ষিণের একটি সেতু বন্ধন হয়। ইউনিয়নে চরপৌলী গ্রামটি প্রায় দু’শ বছরের পুরানো। দু’শ বছরের পুরোনো গ্রামটিতে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার এবং ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতি বছরই এলাকায় পশ্চিম দিক থেকে ২-৩ শত করে ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। গ্রামটিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ৭২ ঘন্টায় যমুনা নদী ভাঙনে মসজিদসহ প্রায় ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে আরো ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি। হঠাৎ ভাঙনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষরা। হুমকিতে রয়েছে শত শত ঘরবাড়ী। অনেকেই তাদের ঘর বাড়ি গাছপালা সহ গবাদিপশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। আবার অনেকেই তাদের বসতঘর সরিয়ে নিতে পারেননি
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় এক মুদি দোকানদার জানান গত ১৫ দিনে এ পর্যন্ত তিনবার ঘর সরাইছি। তারপরও হুমকির মুখে রয়েছি। কখন বুঝি সব যমুনা গিলে খায়। অপর এক ব্যক্তি জানান, বসতবাড়ি হারিয়ে তারা দিশেহারা। কেউ কেউ শোকে কাঁদছেন ১৪ পুরুষের ভিটেমাটি গিলে খেলো রাক্ষুসী যমুনা।
ইউপি সদস্য আবুল বাশার বলেন, কাকুয়া ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডে মাদ্রাসাসহ প্রায় ৫ শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে প্রায় সহ¯্র বাড়িঘর ও বসতভিটা । এ অবস্থায় আমরা খুব কষ্টে রাত্রিযাপন করছি। এ এলাকায় বাঁধ হলে হয়তো ভাঙণের কবলে পড়তে হতো না।
কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, সারিয়াকান্দি থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর দক্ষিণ পার্শ্ব পর্যন্ত সরকার ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধের কাজ করে দিয়েছেন। পানির চাপ পড়ছে কালিহাতী ও টাঙ্গাইল সদরে চর পৌলী গ্রামের শেষের দিকে। প্রতি বছরই বাড়ি ভাঙছে আর আমরা পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছি। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এসে কথা দিয়েছিলেন চরপৌলী গ্রামে পাথর ও জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। শুনেছি ওই প্রজেক্টটি জমা দেয়া হয়েছে কিন্তু তার কোন কার্যক্রম এখনো হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রানুয়ারা খাতুন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে কিছু কাজ কথা। অন্য বছরের তুলনায় এবার আগে পানি চলে আসছে। স্থানটিতে প্রতি বছরই ভাঙন হয়। স্থায়ী কোন বাঁধ না হলে ভাঙন ঠেকানো খুবই কষ্টকর। আগামীকাল জেলা প্রশাসক স্যারসহ আমরা ওই এলাকা পরিদর্শণে যাব। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কি করা যায়।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে আপতত পদক্ষেপ গ্রহণ করার কিছু নেই। কারণ লম্বা নদী ভাঙ্গন কাজলেও এখন তা টিকবে না।
টাঙ্গাইল-৫ আসনের এমপি ছানোয়ার হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণে কালিহাতী ও সদরের চরপৌলী এলাকায় পানির পুরো চাপ পড়ছে। যেভাবে ভাঙছে তাতে ইমার্জেন্সি কোন কাজ করা যাবে না। দীর্ঘ চার বছর প্রতিক্ষার পর ১৮০৩ কোটি টাকার (১৫.৩ কিলোমিটার) কাজ পাশ হয়েছে। বিদেশি একটি প্রজেক্টের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।