
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কে বাড়ছে যানজট ॥ চার লেনের কাজ বন্ধের দাবি
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম, টাঙ্গাইল: ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ীর চাপ আর ওভারটেকিং এর কারণে বাড়ছে যানজট। ফলে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
মহাসড়ক চার লেনের কাজ চলার পাশাপাশি কদিনের টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ থাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ঈদের আগ মূহুর্তে এর মাত্রা আরো কয়েকগুন বাড়বে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে চার লেনের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি করেছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
জানাগেছে, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চার লেনের কাজ চলছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিদিন ন্যূনতম ২৪ হাজার গাড়ি চলাচল করছে এ মহাসড়কে। ঈদের সামনে এ মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫ হাজারে। এমতাবস্থায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ঈদকে সামনে রেখে চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা পুলিশ বলছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদে যানজট এড়াতে নানা কর্মসূচি নেয়া হবে।
গাড়ীচালকরা মনে করছেন সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এবারও ঈদে নির্বিঘেœ বাড়ি পৌঁছানো কিংবা বাড়ি থেকে ফেরা ব্যাহত হবে। বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের অন্তত ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। তাই এ মহাসড়কে গাড়ির চাপ থাকে বেশি। এ কারণে প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে এ সড়কে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া টাঙ্গাইলের ধেরুয়া রেল ক্রসিংয়ে উত্তরবঙ্গের ১২টি ট্রেন দিনে ২৪ বার আসা-যাওয়া করে এবং এ কারণে এই রেল ক্রসিংয়ে মহাসড়কের যানবাহনগুলোর প্রায় দেড় ঘণ্টা নষ্ট হয়। এটিও যানজটের কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় রাস্তা বন্ধ রেখে মহাসড়কের চার লেনের উন্নীতকরণের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুধু টাঙ্গাইল নয়, গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মহাসড়কে চার লেনের এ কাজ চলছে। মহাসড়কে অনেক অংশে ভেঙে চার লেনের কাজ করা হচ্ছে। এতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দকের সৃষ্টি ও রাস্তা খুঁড়ে কাজ করায় যান-চলাচলে বিঘেœর কারণে দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। এসব জায়গায় যান চলছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। ফলে টাঙ্গাইলের সীমানায় মির্জাপুরের গোড়াই থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত অন্তত ৪৫ কিলোমিটার এলাকার পাকুল্লা, জামুর্কী, করটিয়া, পৌলী ও এলেঙ্গায় প্রায় সময়ই গাড়ীর ধীরগতি থাকে। দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হলেও যানজট সৃষ্টি হয়।
কালিহাতী-টাঙ্গাইল-ঢাকা রোডে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রী ছাব্বির হোসেন বলেন, এর আগে ঢাকাতে দিন গিয়ে দিন ফিরে আসা যেতো কিন্তু এখন আর তা সম্ভব হয় না। মনে হয়না ওভারটেকিং বন্ধ না যানজট নিরসন হবে। এছাড়া ফোর লেনের কাজ চলমান থাকাঢ যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী কয়েকটি দূরপাল্লার বাসের চালক ও সুপারভাইজাররা মনে করেন, চার লেনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ মহাসড়কে যানজট থাকবেই। তবে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যদি নিয়মিত তৎপর থাকে তাহলে অনেকাংশে যানজট কম হবে। ঈদে ঘরমুখো ও ফিরতি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে চার লেনের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তাহলে কিছুটা হলেও যাত্রীদুর্ভোগ কমবে।
জেলা বাস-কোচ মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন’র সম্পাদক মীর লুৎফর রহমান লালজু বলেন, এ মহাসড়কে প্রতিদিন ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। ঈদের ৪-৫দিন আগে থেকে পরেও ৩-৪দিন মহাসড়কে প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। এ অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ এ মহাসড়ক সহ্য করতে হিমশিম খায়। চার লেনের কাজ চলা, বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দকের সৃষ্টি হওয়া এবং আগের সড়কের অবস্থাও ভালো না থাকার কারণে এবছরও ঈদে যানজট হচ্ছে। তিনি মনে করেন, ঈদ মৌসুমের আগে-পরে ৫-৬দিন মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলে যানজট কম হবে। তাই তিনি চার লেনের কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানান।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানান, কয়েকদিন যাবত গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি থাকায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যানজট অনেক বেশি থাকলেও আশা করি শুক্রবার থেকে যানজট কমে যাবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মাহবুব আলম পিপিএম বলেন, মহাসড়কের নিরাপত্তা ও যানজট নিরসনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছে। আর যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীদের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয় সেজন্য জেলা ও হাইওয়ে পুলিশ রাস্তায় দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদে যানজট এড়াতে নানা কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ-আলোচনা করে এই চার লেনের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করছি। আর যেসব জায়গায় যানজট সৃষ্টি হবার সম্ভবনা বেশি সেইসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সব সময় উপস্থিত থাকবে।