
স্পোর্টস ডেস্ক: লাভ বার্ডস, বাজিগার, সান কনিউর পাখি রোমান সানার ফেরার অপেক্ষাতেই ছিল! টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে প্রতিদিনের রুটিন অনুশীলন শেষে পাখির জন্য খাবার নিয়ে এলেন রোমান। বাংলাদেশের আর্চারির ‘পোস্টারবয়’কে দেখে ডাকাডাকি বন্ধ পাখিগুলোর। স্টেডিয়ামের ডরমিটরিতে রোমানের কক্ষের পাশে পাখির আবাস। খেলার অবসরে পোষা পাখির সঙ্গে সময় কাটে রোমানের।
পরশু থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছে এশিয়া কাপ আর্চারির ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং স্টেজ ওয়ানের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দল। কিন্তু বিশ্রামের সময় নেই রোমান-দিয়া সিদ্দিকীদের। বছরজুড়ে ঠাসা সূচি। এপ্রিলে তুরস্কে বিশ্বকাপ আর্চারির স্টেজ ওয়ান। মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্বকাপের স্টেজ টু এবং ইরাকে এশিয়া কাপের স্টেজ টু, জুনে তুরস্কে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস ও প্যারিসে বিশ্বকাপের স্টেজ থ্রি। সবশেষে সেপ্টেম্বরে চীনে এশিয়ান গেমস এবং অক্টোবরে সৌদি আরবে এশিয়া কাপ স্টেজ থ্রিতে খেলবে বাংলাদেশ।
গতকাল দুপুরে স্টেডিয়ামে পা রাখতেই মনে হলো, এ যেন ঘুমের রাজ্য! মিনিট দশেক পরই আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠল স্টেডিয়াম। তির-ধনুক নিয়ে অনুশীলনে নামলেন আর্চাররা। দেড় ঘণ্টা অনুশীলন শেষে চলল নির্মল আড্ডা।
থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক অভিষেক সাগর ইসলামের। প্রথম বিমানে চড়ার রোমাঞ্চের চেয়ে বিকেএসপির তরুণের মনে ভয় ছিল বেশি। রোমান মজা করে বলছিলেন, ‘সাগর বারবার জিজ্ঞাসা করছিল বিমানে উঠলে কেমন লাগে? আমি বলেছিলাম, ভুলেও জানালা খুলবি না। কিন্তু দেখলাম, হাত দিয়ে সাগর বারবার জানালা খোলার চেষ্টা করছে। ওর কাণ্ড দেখে সে কী হাসাহাসি আমাদের!’
সাগরের চেহারায় রাজ্যের লজ্জা। ব্যাপারটা বুঝেই রোমান আড্ডার প্রসঙ্গ ঘোরালেন। হঠাৎই দিয়ার রান্নার প্রশংসা শুরু হলো, ‘আমাদের ক্যাম্পে দিয়া ভালো রান্না করতে পারে। গত সপ্তাহে বারবিকিউ পার্টি করেছি। রিকার্ভের ছেলেদের দলটা মাংসের বারবিকিউ করে। পরের সপ্তাহে মাছের বারবিকিউ করে মেয়েরা। সেদিন ওর বানানো বারবিকিউ খেতে বেশ লেগেছে।’
অনুশীলন শেষে পানি খাওয়া নিয়ে যে কতটা মজা হয় তা জানান রামকৃষ্ণ সাহা, ‘আমরা প্রায় সময় পানির বোতল নিয়ে মজার একটা খেলা খেলি। মঙ্গলবার আধা বেলা অনুশীলন শেষে খেলাটা খেলতে হয়। একটা খালি বোতল মেঝেতে রেখে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যার দিকে মুখ পড়বে, তাঁকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি খেতে হবে।’ একবার ৫ লিটার পানি খেয়ে বমি করে একাকার হাকিম আহমেদ!
কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখও মজার খেলা চালু করেছেন। অনুশীলন শেষে বাড়তি শুট-অফ রাখা হয়। আর্চারদের পাশে থাকে ২০০ টাকার নোটের বান্ডিল। বুলস আইয়ে ‘পারফেক্ট টেন’ মারলে টাকার বান্ডিল মেলে। থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগে ‘পারফেক্ট টেন’ মারার সে কী চেষ্টা সবার! প্রথমবার দলে সুযোগ পাওয়া সাগর ও ফাহমিদা সুলতানা শেষ পর্যন্ত জেতেন।
সেনাবাহিনীর আর্চার নাসরিন আক্তার থাইল্যান্ড থেকে ফিরে নিজ সংস্থার নিয়মকানুনের আনুষ্ঠানিকতা সারতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় ফেরেন সেনাবাহিনীর পোশাক পরেই। একটি সোনার পদকে জীবনই বদলে যেতে বসেছে নাসরিনের, ‘আজ ইউনিটে গিয়ে সুখবর পেয়েছি। সেনাবাহিনীপ্রধান স্যার আমাকে ডেকেছেন, পদোন্নতি হতে পারে।’ কাঁধের চোটে মাসখানেক খেলার মধ্যে ছিলেন না। কিন্তু চোট নিয়ে অনুশীলন করেও প্রথমবার সোনা জিতেছেন। নাসরিনের কাছে আনন্দটা আলাদা, ‘এখনো বাড়ি যেতে পারিনি। কখন মায়ের গলায় পদক তুলে দেব সেটাই ভাবছি। আগে মা আমাকে খেলতে দিতেন না। এখন আমি কিছু জিতলে বেশি খুশি হন মা।’
টঙ্গী স্টেডিয়ামের আবাসিক ক্যাম্পটা যেন আর্চারদের দ্বিতীয় ‘বাড়ি’। সুখ–দুঃখের অনুভূতিগুলো নিজেদের মধ্যেই ভাগাভাগি করেন রোমান–দিয়ারা।