
তেল চোরদের কাছে বাঘাবাড়ি কর্মকর্তারা অসহায়
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সংঘবদ্ধ তেল চোরদের কাছে বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর কর্মকর্তারাই অসহায়। এ তথ্য জানিয়েছেন, খোজ বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর ইনচার্জ ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির ম্যানেজার আব্দুল মজিদ। তিনি বলেন,বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপো এলাকার সংঘবদ্ধ তেল চোর চক্রের সন্ত্রাসীরা এতোটাই ভয়ংকর ও দূর্ধর্ষ যে, তাদের কাছে আমরাই অসহায়। তেল চুরির প্রতিবাদ করলে তারা আমাদেরই মারতে আসে। ফলে তাদের হাতে আমরাই জিম্মি। প্রাণ ভয়ে তেল চুরি নিয়ে কোন কথা বলতে সাহস পাইনা। চাকরি বাঁচাতে ওদের সাথে মিলতাল করে চলি। এ সময় সেখানে পদ্মা ওয়েল কোম্পানির ম্যানেজার আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার কথায় সায় দেন। গত ১৬ জুলাই দৈনিক যুগান্তর ও বিজয় টিভির শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহানের উপর তেল চোরদের হামলা ও বেধরক মারপিট হত্যা চেষ্টার পর তিনি প্রাণ রক্ষার্থে বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর ইনচার্জ ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির ম্যানেজার আব্দুল মজিদের অফিস কক্ষে আশ্রয় নেন। এ সময় তিনি এ কথা বলেন। এরপর গত ২৪ জুলাই হজে¦ যাওয়ার আগে সাংবাদিক জাহানের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই একই কথা বলেন। তার এ কথার প্রমাণও মিলেছে। গত ২৭ জুলাই সাংবাদিক জাহান হত্যা চেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাদপুর থানার এসআই মোতালেব ও শাহজাদপুর থানা সার্কেলের এএসপি ফাহমিদা হক শেলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও মামলার প্রাথমিক তদন্তে গেলে বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর কর্মকর্তারা সঠিক তথ্য না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। এমন কি প্রত্যক্ষদর্শিরাও প্রাণ ভয়ে ও তেল চোরদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে প্রকৃত ঘটনা চেপে গেছেন।
গত ১৬ জুলাই রোববার দুপুরে বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর ভিতরে ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরির ছবি তোলায় দৈনিক যুগান্তর ও বিজয় টিভির শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহানের উপর হামলা চালিয়ে বেধরক মারপিট ও হত্যা চেষ্টার আসামীরা সবাই সাংবাদিক জাহানের উপর হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টা ও ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরির সাথে জড়িত।
গত ১৬ জুলাই রোববার দুপুরে বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর গেটের ভিতরে ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরির ছবি তোলায় যমুনা ওয়েল কোম্পানির অফিস কক্ষে ঢুকে সংঘবদ্ধ তেল চোর চক্রের সন্ত্রাসীরা দৈনিক যুগান্তর ও বিজয় টিভির শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহানের উপর হামলা চালিয়ে বেধরক মারপিট ও শ^াসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ২০, তাং২৩/৭/২০১৭ ইং। সাংবাদিক মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহান বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ সহ আরো অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেন। তিনি ওই দিন বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ফার্ণেস ওয়েল ঘাট দিয়ে ওটি তটিনি নামের একটি তেলবাহী জাহাজ থেকে ছয় লাখ লিটার অবৈধ ডিজেল চুরি করে কালোবাজারে বিক্রি করার নিউজের ফলোআপ করতে সেখানে যান।
এ সময় বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর সিকিউরিটিদের সামনেই ডিপো গেটের ভিতরে ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরি করতে দেখে তিনি এর ছবি তোলেন। এই ছবি তোলার কারণে এ দিন দুপুরে ওই সংঘবদ্ধ তেল চোররা বেআইনি জনতায় সংঘবদ্ধ হয়ে তার উপর হামলা চালিয়ে তাকে বেধরক মারপিট ও শ^াসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এ হামলায় তার বাম চোখ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। লাথির আঘাতে মেরুদন্ডের হার বাঁকা হয়ে প্রতিটি জয়েন্ট সরে গেছে। এ ছাড়া তার মাথা ও আঘাত গুরুতর বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছে।
জানা যায়, গত ৭ জুলাই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ফার্ণেস ওয়েল আনলোড ঘাটে ওটি-তটিনি নামের একটি জাহাজ চোরাই ও অবৈধ ৬ লাখ লিটার ডিজেল তেল নিয়ে আসে। এরপর ৮ জুলাই সকাল থেকে ১২ জুলাই রাত ১০ টা পর্যন্ত এ তেল পলিথিনের পাইপের সাহায্যে ট্যাংকলরীতে লোড দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে কালোবাজারে বিক্রি করে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়। প্রতি লিটার ডিজেল ৬২ টাকা ৮১ পয়সা হিসাবে এর বাজার মূল্য ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বলে জানা যায়। ১৫ জুলাই শনিবার দৈনিক যুগান্তরে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। ওই সংবাদের ফলোআপ করতে গিয়ে তিনি ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরির ছবি তোলায় এ হামলার শিকার হন।