
দেশের সব মূর্তি অপসারণের দাবী জানিয়েছে হেফাজত
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম, ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের অবস্থিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণের পর এবার সারা দেশের সব মূর্তি অপসারণের দাবী জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। হেফাজতের ঢাকা মহনগর শাখার আয়োজনে ২৬ মে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে শুকরিয়া মিছিল শেষে হেফাজতের নেতারা এসব দাবী জানান।
সুপ্রিমকোর্টের সামনে স্থাপন করা ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানানো ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের দাবি আরও সুদূরপ্রসারী। তারা চার বছর আগেই দেশের সব ভাস্কর্য অপসারণের দাবি তুলেছে। সে দাবি এখনও বহাল আছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। গত ডিসেম্বরে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক দেবী থেমিসিসের আদলে স্থাপন হয় ভাস্কর্য। এটি স্থাপনের পর পর ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলো এটি অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে। আর রমজান মাস শুরুর আগেই এটি অপসারণ না হলে পরিণতি ভাল হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে যান এর নির্মাতা মৃণাল হক।
শুক্রবার সকালে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে থেমিসিস দেবীর মূর্তি স্থাপনই সংবিধানবিরোধী। ধর্মীয় উস্কানিমূলক ও অমার্জনীয় অপরাধ। আমরা মনে করি এটা অপসারণের জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণ দাবি জানিয়ে আসছে। দেশে ভাস্কর্য নিয়ে আন্দোলন এর আগেও হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিমানবন্দর মোড়ে স্থাপন করা লালনের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয় ধর্মীয় গোষ্ঠীর আন্দোলনের মুখে। ওই সময় রাজধানীর মতিঝিলে বিমান অফিসের সামনের ভাস্কর্য বলাকাতেও হামলা হয়।
সব ভাস্কর্য নিয়ে আপত্তি থাকলেও আন্দোলন কেবল সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যকে নিয়ে কেন? জানতে চাইলে হেফাজতের নায়েবে আমির বলেন, অন্যান্য মূর্তিগুলো অতটা দৃশ্যমান নয়। নজরে আসেনি, তাই আন্দোলন গড়ে উঠেনি। যেহেতু এটি হাইকোর্টের সামনে এবং জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশে। তাই এটা সবার চোখে পড়েছিল এবং তার বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হয়েছিল। এই ভাস্কর্যটির মতো অন্যগুলো অপসারণে আপনারা একইভাবে কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না- জানতে চাইলে আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘আমাদের কথাবার্তা, বক্তৃতা, বিবৃতিতে মূর্তি বা প্রতীকবাদী চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি এবং থাকব।’
হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আমরা দেশের সব ‘মূর্তি’ অপসারণের দাবি জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আর কোথাও যেন এভাবে ‘মূর্তি’ স্থাপন করা না হয়, সে দাবিও জানিয়েছি। নূর হোসাইন কাসেমী আরও জানান, শুকরিয়া আদায় মিছিল শেষে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত করেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, পরিস্থিতি শান্ত করতেই তারা এ উদ্যোগ নিয়েছে। ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল করে কয়েকটি সংগঠন। পরে সকালে আরও কয়েকটি সংগঠন বিক্ষোভে অংশ নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এসময় প্রতিবাদকারীদের চারজনকে আটক করে পুলিশ।
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামীর অবরোধের সময় সাক্ষাৎকারে আবদুল লতিফ নেজামী বলেছিলেন, এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য অপরাজেয় বাংলাও জনতার দাবির মুখে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হবে সরকার।