
পরিবর্তনের ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রমত্তা পদ্মার মাঝির মতো ঝড়-বাদলের নিত্য সহচর। দুর্বিনীত স্বৈরাচারী হাতের হিংস্রতা ধেয়ে এলেও তারা অবিচলিত। দুঃশাসনের কাল রাত পোহাতে আর বেশি সময় নেই। পরিবর্তনের ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। তাই তো ক্ষুব্ধ জনগণের উদ্বেল অভিযাত্রায় প্রবল বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়ার ভয়েই নিজেদের হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার।
আজ সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজভী এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে গতকাল বলেছেন, ‘রাজনীতি করতে সাহস লাগে, মামলা মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের সেই সাহস নেই।’ তাহলে কাদের সাহেব, আপনাদের যখন এত সাহস, তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। আপনারাই তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিলেন, ঘাতকের বীভৎস তাণ্ডব চালিয়ে হরতাল-অবরোধ করে গাড়ি পুড়িয়েছিলেন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এখন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে নিজেদের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করেছেন। নিজেদের মর্জি ও প্রয়োজনমাফিক সংবিধান বদল বা সংশোধন করেন, কিন্তু এখন বিএনপিকে সংবিধানের দোহাই দেন। সংবিধানে তো সব দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে, কিন্তু সাংবিধানিক সেই বিধান তো আপনারা মানছেন না। সভা-সমাবেশের সেই অধিকার তো আপনারা বাকশালী খাঁচায় বন্দি করে রেখেছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘মূলত ভয়াবহ দুর্নীতি, দুঃশাসন আর নির্যাতন নিপীড়নের কারণে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনারা শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। মাইনাস টু তত্ত্ব মেনে নিয়ে আপনার নেত্রী বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন, এটি কোন ধরনের সাহসের নমুনা? মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বন্দি করে কীভাবে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে, তা নিশ্চয়ই কারো অজানা নেই। অন্যায়ভাবে একজনকে নির্যাতন চালিয়ে পঙ্গু করা কি সাহসের দৃষ্টান্ত না কাপুরুষের নমুনা? সেই মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারকে বলেছেন, আপনাদের আন্দোলনের ফসল। তাদের সব অন্যায়কে আপনারা বৈধ করে দেবেন বলেছিলেন। আপনারা আপনাদের আন্দোলনের ফসলের রক্তাক্ত জুলুম-নির্যাতনের ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রেখেছেন। ১/১১-এর সময় সরকারি নির্যাতনের ভয়ে কে কী বলেছেন তা এখনো জনগণ ভুলে যায়নি। সেখানে দেশবাসী নিশ্চয়ই আপনাদের সাহসের সমাচার খুব ভালো করেই জানে। সেই সময় আপনারা আপনাদের নেত্রীকে সকল অনিয়ম ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত করে নিজেরা বাঁচার চেষ্টা করেছেন।’
সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সীমান্তে যখন প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশিদের নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তখন তো আপনাদের কোনো সাহসী প্রতিবাদ জনগণ দেখেনি। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নিজেদের দেশের মানুষকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে শঙ্কা আর শিহরণের ক্ষণে ক্ষণে নৈরাজ্যের ছায়া বিস্তার করে দেশকে বিরোধী দলশূন্য করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।’
বিভিন্ন স্থানে হামলার নিন্দা
সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানানো হয়। রিজভী বলেন, গত ২২ জুলাই নোয়াখালীর সেবারহাটে রাস্তার দুই পাশে নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুককে সংবর্ধনা দেওয়ার সময় সেনবাগ থানার ওসি হারুন রশীদ চৌধুরী হুমকি দিয়ে ফারুককে ঢাকায় চলে যেতে বলেন। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে সেনবাগের উদ্দেশে রওনা হলে পুলিশ বিনা উসকানিতে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। এতে সেনবাগ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক সোহাগ, সেনবাগ উপজেলা বিএনপির সদস্য জাহাঙ্গীর শুভ, উপজেলা যুবদলের সভাপতি যুবরাজ খান ডলার ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক রাজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ হামলা চালালেও উল্টো আহত নেতাকর্মীসহ নেতৃবৃন্দের নামে বিশেষ আইনে মোক্তার হোসেন পাটোয়ারী, বিএনপি নেতা জহিরুল ইসলাম, নুর নবী বাচ্চু, একরামুল হক সোহাগ, সেনবাগ উপজেলা যুবদল নেতা সুলতান সালাউদ্দিন লিটন, দুলাল, মাসুদ, ছাত্রদল নেতা স্বপন, রাজু, ফখরুল ইসলাম রুবেল, শাহাদাৎ হোসেন রাজুসহ ৪৩ জনকে আসামি করে মিথ্যা মামলা করেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি হানায় এলাকায় এক আতঙ্কজনক পরিবেশ বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর ইউপির চেয়ারম্যান জাফর খানসহ পাঁচজনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি দলের পক্ষ থেকে পুলিশি এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গতকাল ২৩ জুলাই ভোলার লালমোহন থানাধীন ধলি গৌড়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাসুদ করিম নীরবের বাসাসহ ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব ঘটায় এবং অসংখ্য বাড়িঘর ভাঙচুর করে। পুলিশ হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করে বরং উল্টো বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম নীরবসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে।
রিজভী বলেন, ‘টাঙ্গাইলে গতকাল বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ ও সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠানটি পণ্ড করে দেয়। পুলিশি হামলায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জেলা বিএনপির সভাপতি কৃষিবিদ শামসুল আলম তোফা, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ ৩২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে এবং আটজন নেতাকর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া গত ২২ জুলাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলাধীন হাটহাজারী উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে কিং অব হাটহাজারী মিলনায়তনে আয়োজিত বিএনপির প্রাথমিক সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আমি দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।’