
প্রেম যমুনা এখন মৃত্যুর মুখে
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ জেলা ও টাঙ্গাইল জেলার দুটি অংশ মিলে প্রেম নদী যমুনা। যমুনা নদীর উপর দিয়ে চলে গেছে দেশের সর্ববৃহৎ ও বিশ্বের এগারতম সেতু হিসাবে। সেতুর দু’পাড়ে দুটি নাম। যমুনার পূর্ব এবং পশ্চিম পাড়। যমুনা নদীকে রক্ষা করার জন্য তৈরি হয়েছে, দুটি থানা, যার নাম যমুন সেতু পূর্ব থানা এবং পশ্চিম থানা। পূর্ব অংশটি টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে এবং পশ্চিম অংশটি সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে।
যমুনার বুকে প্রেম যমুনার ঘাটটিই সবচেয়ে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন ঘাট। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে যমুনা নদীর দু’ধারে তৈরি করা হয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষার্থে একটি বিশাল বাঁধ। এখানে ঘুরতে এসে মন হারিয়ে অপরুপ সৌন্দর্য্য।
আকাশের মেঘের সঙ্গে রঙ ধনু খেলা করে। প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যায় গহীন অরোণ্যে। মনে হয় যেন শিল্পির ক্যানভাসে আঁকা ছবি। নদীতে ভ্রমণের সময় হঠাৎ করে পেয়ে যেতে পারেন ছোট বড় অনেক চর। এমন চর পেয়ে গেলে সেখানে নেমে গোসলও করতে পারেন মনের আনন্দে। এটি হতে পারে আপনার জীবনের একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা। গোসলের সময় হয়তো আপনার মুখ থেকে অবলিলায় বেড়িয়ে আসবে বিখ্যাত সেই গান “আরে যমুনার জল দেখতে কালো স্নান করিতে লাগে ভাল”।
এক কথায় বলা যায়, একবার এসে দেখেন যমুনার ঘাটে, আপনার মনে আলাদা একটা শান্তি পাবে। সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচির প্রেম যমুনার ঘাট বেতিল বেড়ি বাঁধ টেকনাফ বা কক্সবাজার থেকে কম না। যমুনা নদী এবং এই নদীর বাঁধের সৌন্দর্য্য একসঙ্গে মিলেমিশে এখানে তৈরি হয়েছে এক অনিন্দ সুন্দর ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, গঙ্গার দীর্ঘতম শাখানদী যমুনা পৌরানিক ও ঐতিহাসিক। দু’দিক থেকেই প্রেমের নদী। তা সে বৃন্দাবনের শ্রীকৃষ্ণের জলকেলি হোক বা মোগল বাদশাদের নৌকা বিহার অথবা সম্রাট শাহজাহানের প্রেমের স্মারক তাজমহলই হোক। উভয় দিক থেকে বলা যায়, প্রেমের নদীর যমুনা তুমি কত অপরূপা।
সে অপরূপ সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করছে জলদূস্যরা। যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব তো দুরের কথা, মানুষের মধ্যেও গণ্য করা অসম্ভব।
যমুনা নদী পৌরানিক ও ঐতিহাসিক, অথচ…কেন এমন দশা হলো? এর কারণ কী? এর মুল কারণ নির্বিচারে বালু উত্তোলন। যার ফলে যমুনা নাব্যতা হারিয়ে জেগে উঠেছে ছোট ছোট চর। যেখানে মানুষ বাড়ি ঘর করে বসবাস করছে। এক সময় ঢাকার মহানগরীর প্রাণ হিসেবে গণ্য হতো বুড়িগঙ্গা নদী৷ কিন্তু সেই শহরের শিল্প আর মানব বর্জ্য সরাসরি এ নদীতে নির্গমনের ফলে নদীটি পানি ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে৷ তাই যমুনা এখন একটা বড় খাল, আবার কোথাও কোথাও একটা বড় নালার মত হয়ে গেছে৷ জলের বহমানতা না থাকায় যমুনা এখন একটা অগভীর বদ্ধ জলাশয়৷ সেই সুযোগে যমুনা নদীর একপাড়ে দ্রুত গজিয়ে উঠছে বস্তি, আর তৈরি হয়েছে কৃষি ক্ষেত৷
সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে দেখা যায় যমুনার বেহাল দশা। যা দেখলে মনে হয় প্রমোত্তা যমুনা নদী মরা খালে পরিণত। অথচ একটি সৌনন্দর্য দেখতে পাওয়া যায়, যমুনার কাঁশবণ। সেতুর সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে হাতের বাম দিকে যে কাঁশবন গুলো দেখা যায়, দেখে মনে হয় যমুনার সমস্ত প্রেম বা ভালবাসা ছেড়ে দিয়ে মানুষের চোখকে ধাঁধা লাগিয়েছে।
যমুনা নদী প্রেম নদী হিসাবে আরও সৌন্দর্যময় হয়েছে, উভয় পাড়ে গড়ে উঠেছে দু’টি পার্ক। যে পার্কে বেড়াতে গেলে দেখা যাবে সৌন্দর্য্যরে প্রতীক গুলো। সেতুর পশ্চিমপাড়ে পলাশ ফুলের সৌন্দর্য, গুচ্ছ গ্রাম, ইকো পার্ক, সবুজ ছায়ায় ঘেরা চারিদিক। সুন্দর বনে যেমন গাছ গাছ আর গাছ তার চাইতে কম নয় সেতুর পশ্চিমপাড়।
সেই ঐতিহাসিক যমুনা আরও যদি সৌন্দর্যময় হতো, যদি না থাকতো বালু চোরেরা। বালু চোরদের কারণেই আজ যমুনা নদীর নাব্যতা হারিয়ে প্রেম যমুনাকে মরা খালে পরিণত করেছে।
যমুনা পাড়ের মানুষের দাবী বালুচোরদেরকে কাজিপুর উপজেলা ও চৌহালীর উপজেলার অবস্থান অনতি বিলম্বে দেখে বালু চোরদের আইনের আওতায় এনে তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হোক।