
ফখরুল সাহেব শুধু কাঁদেন, আমি বলি আপনারা ভাল আছেন: ওবায়দুল কাদের
যশোর প্রতিনিধি: নেতা-কর্মীদের ওপর ‘নির্যাতনের’ কথা বলতে গিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্না বাস্তবতাবিবর্জিত বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল সাহেব এখন শুধু কাঁদেন। আমি বলি আপনারা তো ভাল আছেন।’
সোমবার যশোর শহরের ঈদগা ময়দানে জেলা ছাত্রলীগের ১৭তম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন কাদের। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কত নেতা-কর্মী গুম, খুন হয়েছিল সেটা ভুলে গেছেন কি না, মির্জা ফখরুলের কাছে তাও জানতে চান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঠাঁকুরগাওয়ে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বক্তব্য দেয়ার সময় দলের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এক পর্যায়ে গিয়ে কেঁদে ফেলেন মির্জা ফখরুল। এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় দলের নেতা-কর্মীদের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করার সময় কেঁদেছিলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনার ওপর চোরাগোপ্তা হামলা হয়েছে। আহত হননি। আমাদের সেদিন রাজপথে রক্তাক্ত করা হয়েছিল। বরিশাল খুলনা, সাতক্ষীরা ও ঈশ্বরদীতে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপির আমলে বাংলাদেশ রক্তের নদী হয়েছিল। অশ্রু দরিয়া হয়ে গিয়েছিল।’
‘আপনারা কাঁদছেন, আমাদের কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে। ফখরুল সাহেব ২০০১-২০০৫ সাল আর আজকের অবস্থা মিলিয়ে নিন। সেইদিন ছিল আমাদের কান্না। আর আজ আপনারা মায়া কান্না করছেন’-বলেন কাদের।
যাদের কারণে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাদেরকে আগামী নির্বাচনে মনোয়ন দেয়া হবে না বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। ঘরের মধ্যে যেন ঘর তৈরির প্রতিযোগিতা না হয়। অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
ঈদের পরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আট বছরে বিএনপি আট দিনও রাজপথে মানতে পারেনি। তারা বলে ঈদের পরে আন্দোলনে রাজপথে নামবে। আট বছরে ১৭টি ঈদ চলে গেল, বিএনপির মরা গাঙে জোয়ার এলো না।’
‘বিএনপি বলে এইদিন না ওই দিন, এই ঈদ না ওই ঈদ। এখন কী মাস চলছে? আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাসের তর্জন গর্জন সার বিএনপির রাজনীতি।’ বিএনপি গত নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে এবং সে কারণে তারা হতাশ বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
অনিয়মতি-অছাত্র ও মাদকাসক্তরা যেন ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান না পায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তাগাদা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আর যেন না শুনি তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।’
সম্মেলনের পর দ্রুত কমিটি দেয়ার তাগিদ দিয়ে কাদের বলেন, ‘কমিটি বিলম্বিত হলে অযোগ্যরা স্থান পেয়ে যায়। এজন্য যশোরের কমিটি যশোর থেকেই ঘোষণা করতে হবে। কমিটি ঢাকায় নেওয়া হলে অযোগ্যরা কমিটিতে স্থান পেয়ে যায়।’‘কমিটি ঢাকায় গেলে ঘাটে ঘাটে অন্ধকারের খেলা হয়। নানা লবিং হয়, কেন্দ্রীয় নেতারা ঠিকমত কাজ করতে পারে না।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, বেনাপোলের পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন প্রমুখ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে উদ্বোধন করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। প্রধান বক্তা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। সভা পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল।
উল্লেখ্য, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের বিভাজনে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে ব্যাপক সহিংসতা হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা তখন সম্মেলন স্থগিত করতে বাধ্য হন। এ ঘটনার পরদিন সদর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক দাদা রিপনকে হত্যা করা হয়।
পরে ২০১১ সালের ১০ জুলাই সমঝোতার ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে আরিফুল ইসলাম রিয়াদকে সভাপতি ও আনোয়ার হোসেন বিপুলকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে যশোর জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছয় বছর পর আজ জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল।