
ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের সঙ্গে তথ্যের মিল নেই: আছাদুজ্জামান মিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরহাদ মজহার আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তার সঙ্গে তদন্তে পাওয়া তথ্য মিলছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
গত নয় দিনের তদন্তে যেসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, সেসবের বিচার-বিশ্লেষণ চলছে জানিয়ে বুধবার নিজের দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে এ নিয়ে বিস্তারিত জানাবে পুলিশ।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “এই অপহরণ নিয়ে অত্যন্ত রহস্য তৈরি হয়েছে। কারণ ফরহাদ মজহার সাহেব বিজ্ঞ আদালতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যে ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি, সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি, কল লিস্ট পেয়েছি, বস্তুগত সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছি, তার সঙ্গে উনার বক্তব্যের মিল নেই।”
ডানপন্থি অধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত কবি প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার গত ৩ জুলাই ভোরে ঢাকার শ্যামলীর রিং রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে ‘অপহৃত’ হন বলে তার পরিবারের অভিযোগ।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে অনুসন্ধান শুরু করে এবং রাতে যশোরে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের কথা জানানো হয়। ফরহাদ মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার আদাবর থানায় যে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন, পরে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে পুলিশ।
ঢাকায় নিয়ে আসার পর ফরহাদ মজহারকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তিনি হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারিক জবানবন্দি দেন। জিজ্ঞাসাবাদে ফরহাদ মজহার বলেছিলেন, সোমবার ভোরে ওষুধ কেনার জন্য তিনি বাসা থেকে বের হলে কয়েকজন একটি মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায়।
আর মামলায় বলা হয়, ফরহাদ মজহার তার ফোন থেকে স্ত্রীকে পাঁচবার কল করে বলেন, অপহরণকারীরা ৩৫ লাখ টাকা চেয়েছে। ওইদিন রাতে যশোরের বাসে ফরহাদ মজহারের খোঁজ পাওয়ার আগে খুলনা নিউ মার্কেট এলাকার ‘নিউ গ্রীল হাউস’র মালিক আব্দুল মান্নান দাবি করেন, তার রেস্তোরাঁয় ফরহাদ মজহার ভাত খেয়েছেন।
পরে টিভিতে ফরহাদ মজহারের ছবি দেখে তিনি র্যাবকে খবর দিলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে যশোরের নওয়াপাড়ায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী একটি বাস থামিয়ে শেষের সারির আসনে ফরহাদ মজহারকে পায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
খুলনার শিববাড়িতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ব্যবস্থাপক নাজমুস সাদাত সাদী পরদিন জানান, ফরহাদ মজহার সেদিন তার কাউন্টার থেকে ‘গফুর’ নামে টিকেট কাটেন। সোয়া ৯টার দিকে কোচটি রয়্যাল মোড় শিববাড়িতে এলে ফরহাদ মজহার গাড়িতে ওঠেন।
কাউন্টার ব্যবস্থাপক সাদীকেও পরে পুলিশ ঢাকায় নিয়ে আসে এবং গত ৬ জুলাই হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় তার বিচারিক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এরপর ফরহাদ মজহারের প্রতিষ্ঠান উবিনীগের সাবেক একজন নারী কর্মীকে পুলিশ সোমবার ঢাকার আদালতে হাজির করে এবং তিনিও হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন।
এর আগে গত ৮ জুলাই পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তাতে তাদের ধারণা হয়েছে, ফরহাদ মজহারের বিষয়টি ‘অপহরণের কোনো ঘটনা নয়’।
আর ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, “কংক্রিট সিদ্ধান্তে আসার জন্য আমাদের আরও দু-একদিন সময় লাগবে। দু-এক দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে এই নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।”