
চৈত্র সংক্রান্তিতে বিদায়-১৪২৩ বঙ্গাব্দ
বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত উত্তরাঞ্চলবাসী
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : মহাকালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বাংলা বঙ্গাব্দ ১৪২৩। ৩০ চৈত্র, ১৪২৩ বঙ্গাব্দের শেষ দিন “চৈত্র সংক্রান্তি।” ৩০শে চৈত্র-১৪২৩ আজ বিদায়ের পালা। ‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক, মুছে যাক গ্লানি’ বিদায়ী সূর্যের কাছে এ প্রণতি চৈত্রের শেষ দিনে জানাচ্ছে বাঙালি। পূর্ব দিগন্ত থেকে ছুটে আসা ভোরের নরম আলো রাঙিয়ে দিলো পৃথিবী, স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনায় সূচিত হবে নতুন বছর। পুরোনো বছরকে বিদায় আর নতুনকে বরণ করে নিতে দেশজুড়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। বাংলা বছরের সমাপনী মাস চৈত্রের শেষ দিনটিকে ‘চৈত্র সংক্রান্তি’ বলা হয়। লৌকিক আচার অনুযায়ী, এ দিনে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় বিশেষ করে বিদায় উৎসব পালন করে। দোকানপাট ধুয়ে মুছে বিগত বছরের সব জঞ্জাল-অসূচি দূর করে পহেলা বৈশাখের দিন খোলা হবে ব্যবসায়িক হিসেব-নিকেষের নতুন খাতা। সে উৎসবের লোকায়ত নাম ‘হালখাতা’। সারা বছরের খরিদ্দারদের কাছে বকেয়া টাকা তুলতে বছরের এই দিনটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার রেওয়াজ কতশত বছরের তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসেছে মেলা। বাংলাপিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, গৃহস্থরা সবাইকে নতুন জামাকাপড় দিত এবং উন্নতমানের খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন করত। মেলার কয়েকদিন এভাবে তারা সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করত। বর্তমানে শহুরে সভ্যতার ছোঁয়া লাগায় আবহমান গ্রামবাংলার সেই আনন্দমুখর পরিবেশ আর আগের মতো নেই। তবে এখন শহরাঞ্চলের নগর সংস্কৃতির আমেজে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব বা মেলা বসেছে, যা এক সর্বজনীন মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলে সিরাজগঞ্জ সহ ৮টি বগুড়া,পাবনা, রাজশাহী, জযয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,নওগাঁ, নাটোর জেলায় চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে বৈশাখী মেলা, নববর্ষের প্রস্তুতি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গুলো চৈত্র সংক্রান্তির শেষ আন্তে নববর্ষকে বরণ করার জন্য প্রস্তুতি পর্ব চলছে। চলছে ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ক্ষুদ্র-নেৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতি উৎসব। যদিও ঢাকা থেকে ৫ মিনিট পর উত্তরাঞ্চলের সূর্যোদয় ঘটবে।
১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বরণ করতে প্রস্তুত উত্তরাঞ্চলবাসী। বছরের প্রথম দিনটি বিশেষ ভাবে উদযাপনে আয়োজন করা হয়ে থাকে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠনসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী আনন্দ উৎসব। তাছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বসবে মেলা চলবে সপ্তাহব্যাপী।
বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশে বৈশাখ আসে বিশেষ বার্তা নিয়ে। ভ্যাপসা গরমের সাথে হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি আবহমান বাংলার গ্রীষ্মকালীন বৈশিষ্ট্য। যদিও মাঝে মাঝে কালবৈশাখী ঝড় আর শীলাবৃষ্টি লন্ডভন্ড করে দেয় ফসলি মাঠ, জনজীবন; তবুও যুগে যুগে শিল্পী-কবিরা বৈশাখ বন্ধনায় লিখেছেন অমর কবিতা ও গান।
বৈশাখকে স্বাগত জানাতে কবি গুরু যেমন গেয়ে উঠেন- ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো..।’; বিদ্রোহী কবিও তেমনিভাবে মেতে উঠেন তার বন্ধনায়- ‘তোরা সব জয় ধ্বনী কর, তোরা সব জয় ধ্বনী কর..।’, ‘ঐ নতুনের কেতন উড়ে।’ বৈশাখী উৎসব মূলত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য-যাত্রাগান, বাউল গান, নাগর দোলা, বৈশাখী মেলা ইত্যাদি। এমন অনুষ্ঠানের মধ্যেদিয়ে বাংলার মানুষ বরণ করে নিবে বাংলা নববর্ষকে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন হবে চুড়ান্ত মহড়া।
নানা আয়োজনে চৈত্র সংক্রান্তির পার্বণ, তখন একই সঙ্গে দুয়ারে কড়া নাড়ছে বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পহেলা বৈশাখ। নতুন বছর ১৪২৪-কে স্বাগত জানাতে পুরো উত্তরাঞ্চলবাসী এখন উন্মুখ।