
বাঘাবাড়ি নৌবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে ডিজেল পাচার : এলাকায় তোলপাড়
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের একটি ঘাট দিয়ে অবৈধ ৬ লাখ লিটার ডিজেল তেল উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে কালোবাজারে বিক্রি করা হয়েছে বলে এক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রতি লিটার ডিজেল ৬২ টাকা ৮১ পয়সা হিসাবে এর বাজার মূল্য ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গত ৮ জুলাই শনিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে ওটি-তটিনি নামের একটি ডিজেলবাহী জাহাজ বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ফার্ণেস ওয়েল খালাসের ঘাটের পাশে নোঙ্গর করে ১২ জুলাই বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে আনলোড করে শাহজাদপুরের একটি সংঘবদ্ধ ক্ষমতাধর প্রভাবশালী চক্র ট্যাংকলরীতে করে শাহজাদপুর সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার জ¦ালানী তেল ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। খবর পেয়ে ১২ জুলাই বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় সহকারী কমিশনার(ভূমি) হাসিব সরকার ও ওসি খাজা গোলাম কিবরিয়ার নের্তৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের আগমণের খবর জানতে পেরে ঘটনাস্থল থেকে জাহাজটি দ্রুত সটকে পরে। ফলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে জাহাজটিকে আটক করতে ব্যর্থ হয়।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার(ভূমি) হাসিব সরকার ও শাহজাদপুর থানার ওসি খাজা গোলাম কিবরিয়া বলেন,বিপিসির বগুড়া ডিপো থেকে বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছাই। কিন্তু তার আগেই জাহাজটি সেখান থেকে কেটে পরে। ফলে জাহাজটিকে আর আটক করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে বিপিসির বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোর ইনচার্জ আব্দুল মজিদ জানান, গত ১২ জুলাই বিষয়টি জানতে পেরে বগুড়া অফিসকে অবহিত করা হয়। সেখান থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। তিনি বলেন, এ দিন রাতেই বগুড়া অফিসের পদ্মা,মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানির এজিএম শখ আল মামুন, মোঃ মিয়াজি ও আনোয়ারুলইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ফার্ণেস ওয়েল আনলোড ঘাটে দায়ীত্বে নিয়োজিত নাটোর লংকা বাংলা পাওয়ার প্লান্টের ম্যানেজার প্রকৌশলি আব্দুস সামাদ ও নিরাপত্তা কর্মী তাজিম উদ্দিন জানান, তাদের বাঁধা উপেক্ষা করে গত ৮ জুলাই শনিবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে ওটি-তটিনি নামের ৬ লাখ লিটার ডিজেলবাহী জাহাজটি অবৈধ ভাবে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের ফার্ণেস ওয়েল খালাসের ঘাটের পাশে নোঙ্গর করে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে ট্যাংকলরীতে আনলোড করে শাহজাদপুর সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ শুরু করে। বিষয়টি তারা তাৎক্ষনিক ভাবে লংকা বাংলার নাটোর পাওয়ার প্লান্টের কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। তারপরেও ১২ জুলাই বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত তারা এ তেল আনলোড শেষে এ স্থান ত্যাগ করে। পরে পুলিশ ও ওয়েল ডিপোর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে এ বিষয়ে খোজ খবর নেয়। তারা আরো জানান, এখানে সাড়ে ৪ লাখ লিটার ডিজেল আনলোড করা হয়। বাকিটা অন্যত্র করা হয়। তবে এই অবৈধ কারবারের সাথে কারা জড়িত ও এ তেল কোন কোম্পানির তা তারা বলতে পারেনি।
এ ব্যাপারে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদুর রহমান ও লেবার এজেন্ট আব্দুস সালাম বলেন বিষয়টি সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না।
এ ব্যাপারে বিপিসির বগুড়া অফিসের ওই ৩ কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে বাঘাবাড়ি মেঘনা ওয়েল ডিপোর সহকারী ব্যবস্থাপক(অপারেশান) সঞ্জয় শীল ও পদ্মা ওয়েল ডিপোর সহকারী ব্যবস্থাপক( অপারেশান) আবুল হোসেন এ ব্যাপারে কোন মুখ খোলেননি। খোজনিয়ে জানা যায় এই অবৈধ কারবারের সাথে জড়িতরা অত্যন্ত ক্ষমতা ধর প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের নাম কেউ প্রকাশ করতে সাহস পাচ্ছেনা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন ব্যবসায়ী ও জাহাজ শ্রমিক বলেন, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত এবং ওটি তটিনি জাহাজের কর্মকর্তা মালিক ও শ্রমিককে আটক করে জিজ্ঞাসা করা হলে প্রকৃত ঘটনা ও এর সাথে কারা জড়িত তা বের হয়ে আসবে। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।