
বিচার বিভাগের স্বার্থে প্রয়োজনে আরও রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে যাব: প্রধান বিচারপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলেই যেতে থাকবেন জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, এসব বক্তব্য যদি কারও কাছে রাজনৈতিক মনে হয় তাতে তার আপত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘তাহলে আমি বলবো, বিচার বিভাগের স্বার্থে প্রয়োজনে আরও রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে যাব।’
শনিবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে আজীবন সম্মাননা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি আগামী বছর ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে চলে যাব। ওই বছর বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়াও অবসরে যাবেন। বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে ৮৪ কি ৮৩ জন বিচারপতি আছেন। আগামী বছর আরো কয়েকজন বিচারপতি অবসরে যাবেন। এভাবে বিচারক শূন্য হলে উচ্চ আদালত চলবে কীভাবে?’।
রাজনৈতিকভাবে বিচারক নিয়োগের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা রেওয়াজ আছে, পলিটিক্যাল সরকার ক্ষমতায় এসে হাইকোর্ট বিভাগে ইচ্ছামত বিচারপতি নিয়োগ দেয়। কিন্তু হাইকোর্টের বিচারপতিদের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে হবে।’
দেশে মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় না উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মামলার অনুপাতে বিচারক নিয়োগ হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের মামলার তুলনায় আমাদের বিচারপতিদের সংখ্যা অর্ধেক। আপিল বিভাগে আরো তিন জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। বিচারক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মৌখিক আবেদন করেছি। কিন্তু বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি না। সরকার একটু এগিয়ে আসলে কালকেই সব হয়ে যাবে।’
বিচারকদের ট্রেনিং প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নেই। জাটিতে (বিচার প্রশাসন ইনস্টিটিউট) এক সাথে মাত্র ৪০ জন বিচারকের ট্রেনিং করানো যায়। ট্রেনিং করানো না গেলে বিচারের মান কমে যাবে। উচ্চ আদালতের বিচারকদেরও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।’
‘জাটি বিল্ডিংটি সম্প্রসারণে জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি, চিঠিও দিয়েছে কিন্তু অগ্যাতকারণে সেটিও আটকে আছে। আমি জুডিশিয়াল ইনস্টিটিউশন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জায়গা বরাদ্দ দেয়ার কথা বলেছিলাম, তিনি বলেছেন, ঢাকায় জায়গা দেয়া সম্ভব নয়। আমি বলেছি, সাভারে অথবা কেরানিগঞ্জে একটু জায়গা দেন। সেটিও এখনো হয়নি।’
সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে নারী বিচারকদের পথপ্রদর্শক উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘পৃথিবীর যেকোনও দেশের চেয়ে আমাদের দেশে নারী বিচারকেরা অগ্রগামী। আমি চেষ্টা করছি মহিলা বিচারপতিদের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এ দেশ এবং বিচার বিভাগের ইতিহাসের অংশ। তিনি এদেশের বিচার বিভাগের অহংকার। তাকে অনুসরণ করে অনেক নারী এই পেশায় এসেছেন। তিনি বিচার অঙ্গণে নারী বিচারকদের কাজ করার পথকে মসৃন করেছেন। আজ তাই দেশে ২৪ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন।’ তিনি অবসরে তাকে বই লেখার পরামর্শ দেন।
বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, ‘আমি আমার বিচারিক জীবনে ন্যায়বিচার করে গেছি। কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা অবহেলায় ভুল বিচার করিনি।’
নারী বিচারকদের উদ্দেশে হাইকোর্টের প্রথম নারী বিচারক বলেন, ‘বিচারকের জীবন মানেই ন্যায় বিচারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া। আর এই দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন ও পরিশ্রমের।’
অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সারাদেশ থেকে আসা নারী বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।