
বৃষ্টির সজিবতায় ফিরে এলো সোনালী আঁশের প্রাণ
বেলকুচিতে কৃষকের মুখে হাসি
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : এপ্রিলের বৃষ্টিতে পাটের কৃষকের একদিকে যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি আবার কৃষকের প্রান চঞ্চলতাও ফিরে এনে দিয়ে পাটচাষীদের। বৃষ্টিতে এবার সোনালী আঁশের সজিবতা ফিরে পেয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার মাঠে প্রান্তরে। কৃষকের মুখে এখন শুধু হাসি আর স্বপ্ন পূরণের আশায় বসে আছে আগামী আষাঢ় মাসের আশায়। অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে একেবারে ভেঙ্গেই পড়েছিল কৃষককুল। সিরাজগঞ্জ জেলায় বেলকুচি উপজেলার কৃষকদের চোখে সোনালী আভা ফুটে উঠেছে। কৃষকদের সঠিক পরিচর্যার কারণে সোনালী আঁশ পাটের চাষ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও পাট চাষে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছে কৃষকরা ।
বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের মেটুয়ানী গ্রামের পাট চাষী আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর কৃষি অফিসের মাধ্যমে বি.এ.ডি.সি অফিস হতে উন্নত জাতের পাটের বীজ পাওয়ায় পাটের ফলন ভাল হয়েছে। আমরা গত মাসের বৃষ্টি পাতের কারণে আমরা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে ছিলাম। মনে হয়েছিল এবার আর পাট চাষ করা সম্ভব হবে না। বৃষ্টির কারণে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পাট বেশ বড় হয়েই উঠে। এবার বৃষ্টির কারণে মাটি লোনা হওয়ায় পুণরায় জমি চাষ করে পাটের বীজ সংগ্রহ করে আবারও নতুন ভাবে পাট চাষ করেছি।
উপজেলার ভূতিয়াপাড়া গ্রামের পাট চাষী আনন্দ সরকার, কার্ত্তিক সরকার, ধুলগাগড়াখালী গ্রামের রাজিব হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আমাদের পাটের ফলন ভাল হয়েছে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়ায় পাট চাষে কাজে লাগাতে পেরেছি বলেই পাটের ফলন ভাল হয়েছে।
একই উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বছর পাট চাষ ভাল হলেও পাটে পোকা মাকড়ের অক্রমণ হতে রক্ষা পেতে প্রচুর টাকার কীট নাশক ব্যবহার করতে হয়েছে এবং কৃষি কর্মকর্তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। জেলার সলঙ্গা থানার লাঙ্গলমোড়া গ্রামের পাট চাষী দিবাকর রায় বলেন, পাটের ভাল ফলন হয়েছে এ কথা যেমন সত্য, তেমনি শংকায়ও রয়েছি। যদি ভাল বাজার মূল্য না পাই, তাহলে পাট নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছি, তা বাস্তবে প্রতিফলিত না হয়ে দুঃস্বপ্নেই পরিণত হবে।
উল্লাপাড়া উপজেলার গয়হাট্টা, শাহজাদপুর উপজেলার বেতকান্দী, বালসাবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে পাট চাষের ফলন ভাল। ঐ এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায়, এবার পাটের ফলন ভাল হয়েছে তেমনি আবার আমাদের মধ্যে তেমনি শংকাও রয়েছে। পাটের যদি আমরা সঠিক মূল্য পাই তাহলেই আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।
এছাড়া বেলকুচি উপজেলার কৃষকদের বাছাইকৃত ছোট ছোট পাটের শাক হাটে বাজারে বিক্রি করছে সবজী বিক্রেতারা। সবুজ শাকের ভিতর পাট শাক একটি উন্নত জাতের খাবার হিসাবে তৈরি হয়েছে। কৃষকরা এবার দেশী ও তোষা উভয় জাতের পাট চাষ করেছে। তোষা জাতের পাটের লম্বা ও বেশ বড় হয়। বর্তমানে পাট এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়েছে।
কৃষকদের কাছ থেকে আর জানা যায়, আমরা এখন স্বপ্ন পূরনের আশায় আছি। আমরা যদি পাটের ন্যায্য মুল্য না পাই তাহলে আমরা আর পাট চাষে আগ্রহ দেখাবো না। ধানের মূল্য নিয়েই বর্তমানে আমরা শংকায় পরেছি। বর্তমানের এক মন ধানের মূল্য একজন কামলার মূল্যের প্রায় সমান। সোনালী আঁশের যদি এ অবস্থা তাহলে ভবিষ্যতে পাট চাষ থেকে বিরত থাকব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সিরাজগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলায় পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। কৃষকরা পাট চাষে যাতে বেশী উৎসাহী হয়, সে জন্য উন্নত বীজ প্রদান সহ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারী ভাবে পাট চাষীদেরকে সঠিক ভাবে তদারকীর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ফলে আমাদের লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও বেশী ফলন হবে বলে আমরা আশাবাদী। যার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকদের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠবে এবং সোনালী আঁশ খ্যাত ‘‘পাট” এখন সোনালী স্বপ্ন তথা সোনালী আশায় পরিণত হবে। প্লাষ্টিক জাতীয় বস্তায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যবহার না করে পাটের বস্তায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ব্যবহার করলে কৃষকরা পাটচাষীরা আরো বেশী আগ্রহ হয়ে উঠবে।