
বেলকুচিতে দেশীয় ফল মিলছে অহরহ
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : মধুমাস অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাসে সিরাজগঞ্জে বেলকুচিতে দেশীয় ফল মিলছে অহরহ। সামনে রমজান মাসে ঠান্ডা জাতীয় ফলের অভাব থাকবে না, মিলবে অহরহ দেশীয় উৎপাদিত ফল। এ মাসে সবার পছন্দের কিছু না কিছু ফল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গ্রামে যাদের ফল কেনার সামর্থ্য নেই তারাও এ মৌসুমে একেবারে বঞ্চিত হয় না। এক সময় তো এ দেশে ফলের প্রাচুর্যও ছিল। নিজের বা পরের গাছ বলেও তেমন কোনো বিধিনিষেধ ছিলো না। অন্তত শিশুদের জন্য বাগানের পরিধি কখনই সীমিত ছিলো না। এখন শহরের মানুষতো বটেই গ্রামের মানুষকেও ফলের জন্য বাজারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবুও মজার মজার ফল নিয়ে প্রতি বছরই জ্যৈষ্ঠ আসে মধুমাস হয়ে। ফল নিজের বাগানের কিংবা বাজারের হোক, তার স্বাদ পেতে কম বেশি সবারই ভালো লাগে।
কাঁঠাল জাতীয় ফল হলেও সে তুলনায় আম সবার প্রিয়। আর এ ফল জেলার প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়। শুধু পাকা আম নয়, কাঁচা আমেরও নানামুখী ব্যবহার রয়েছে। জেলা ও উপজেলায় উৎপাদিত সর্বত্র আম হলেও মাটির গুণাগুণ এবং আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে স্বাদের ভিন্নতা রয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদন বা পর্যাপ্ত ফলনের ওপর ভিত্তি করেও কিছু বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে নানা স্বাদের আম হয় প্রচুর পরিমাণে। ফল পাকার মৌসুম বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত। কাঁচা আম সবুজ, পাকলে হলুদ বা টকটকে লাল। মিষ্টি শাঁসের ভেতর একটা শক্ত আঁটি থাকে। আম স্বাদে গন্ধে সত্যিই অতুলনীয়। শুধু তাই নয়, তার আছে অনেক পুষ্টিগুণ।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সমেশপুর ওয়াপদা বাঁধ ও রাজাপুর গ্রাম এলাকা, ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়ন, দৌলতপুর ইউনিয়ন, বেলকুচি সদর ইউনিয়নের যমুনা পূর্ব পাড়ের অংশ, ভাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন গ্রাম এলাকা সহ উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। কাঁঠালের স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিগুণ এবং সহজলভ্যতা-সবকিছু মিলিয়েই জাতীয় ফলের মর্যাদা পেয়েছে। এ ফল কাঁচা অবস্থায়ও খাওয়া যায়। একেবারে মাটির কাছাকাছি থেকে ওপরের সরু ডাল পর্যন্ত ফল হয়। এ ফলে পুষ্টিগুণ অনেক। কাঁঠালের বীজ খাবার উপযোগী এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
উপজেলার বেলকুচি সদর ইউনিয়ন ও বড়ধুল ইউনিয়নের চর এলাকায় প্রচুর পরিমান বেলে বাংগি উৎপাদিত হয়েছে। বেলে বাংগি খেতে মজা এবং পেট ঠান্ডা রাখে। আকার ভেদে ছোট, মাঝারি এবং বড় ধরনের ধরণের হয়। মুলকান্দির চর, বেড়াখারুয়ার চর এলাকায় চাষীদের নিকট থেকে জানা যায়, চরা এলাকায় গত বৎসরের তুলনায় এবার বাংগি উৎপাদন বেশী হয়েছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এই ফল পাকতে থাকে এবং একদিন ঘরে থাকলেই বাংগি ফেটে চৌচির হয়ে যায়।
বাংগি গুলো মুকুন্দগাঁতী বাজারে এবং চালা গ্যারেজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অহরহ। বাংগি ক্রেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, গরমের মৌসুমে বাংগি খেতে ছেলে মেয়েরা বায়না ধরে। শুধু মাত্র বাংগি কিনলেই চলে না এর সঙ্গে গুড় অথবা চিনিও কিনতে হয়। প্রতি পিচ বাংগি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা মধ্যে। বেলকুচির চর এলাকার কৃষকরা জানান, আর কয়েকদিন পরেই রোজা। রোজার মাসে এবার বেলে বাংগি বিক্রি হবে ভাল এবং রোজাদারদের পেটও ঠান্ডা রাখবে।
উল্লেখ্য, শুধু কয়েকটি ফলই নয়। মধুমাসে আরো অনেক ফল পাওয়া যায়। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তরমুজ, গোলাপ জাম ইত্যাদি।