
বেলকুচির চর এলাকায় সবজি ও ফসলের বাম্পার ফলন
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি যমুনা নদীর চর এলাকায় নানা ধরণের সবজি ও ফসলের বাম্পার ফলন। চরের মাটিতে গড়ে উঠছে নানা ফসল। চলতি মৌসুমে যমুনা নদীর উজানে কাজিপুর উপজেলা থেকে ভাটিতে চৌহালী উপজেলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ হলেও মাঝ পথে রয়েছে বেলকুচির চর। এখানে আবাদ হচ্ছে নানা জাতীয় সবজি। যেমন-কাঁচকলা, পুইশাক, মিষ্টি কুমড়ো, লাউ, ভেরাইল, পেপে, বেগুন, ছোট ছোট করলা, ধনিয়াপাতা, লাল শাক সহ নানা জাতীয় সবজি। বারি ফসলের মধ্যে রয়েছে সরিষা, ভুট্টা, মাসকলাই এবং বোরো ধান রোপনের কাজ। নদী ভাঙ্গনকৃত বিপর্যস্ত মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি। বর্ষা মৌসুমে কড়ালগ্রাস যমুনা বসত ভিটা কেড়ে নিলেও উৎপাদিত ফসল তাদের শক্তি ও মানসিক শক্তিবল অর্জিত হয়েছে চরের মানুষ গুলোর। চরের যেদিকে তাকানো যায় শুধু সবজি আর ফসল। নানা ধরনের ফসল চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। একারণেই ক্ষুধা ও দারিদ্র থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে চরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তাদের উৎপাদিত সবজি গুলো প্রতিনিয়ত বিক্রি হচ্ছে উপজেলার হাট বাজার গুলোতে। ভর অঞ্চল অর্থাৎ শহর বা উপ-শহরের লোকেরা বেশী পছন্দ করে চরের সবজি। ক্রেতা সাধারনের ভাষ্য তারা ফরমালিন মুক্ত এবং তাজা সবজি পাচ্ছে বেলকুচির পৌর এলাকার হাট-বাজার গুলোতে, সবজি গুলো তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায়।
যমুনার বিস্তীর্ন চরে সরিষা, বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, মিষ্টি আলু, সহ নানা ফসল চাষ করে চরের মানুষ সংসারে এনেছে সচ্ছলতা। নদী ভাঙ্গনে শিকার এসব মানুষ অভাব-হতাশাকে পেছনে ফেলে নতুন করে আবাদ করে, নতুনভাবে অবতীর্ন হয়েছে জীবনযুদ্ধে। জীবন সংগ্রামে দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে জয়ী হয়েছে নদীর তীরবর্তী মানুষ। এ বছর শীতের ফসল চাষ করে শত ভাগ সাফল্য পেয়েছে বর্তমানে ধানের চাষে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছে।
চরে বসবাসকারী কৃষক আষান, রফিক, আনছার, রবিউল মতো অন্যান্যদের ভাষ্য-যমুনা নদী মানুষের আশীর্বাদ, নদী শুধু নিতেই জানে না দিতেও জানে। কড়ালগ্রাস যমুনা স্রোতধারায় ভেঙ্গে যাচ্ছে বিস্তৃীর্ন জনপথ, ফসলের মাঠ। সেই যমুনার উজান থেকে বয়ে আসা পলি মাটির স্তর জমে সোনার ফসল ফলাতেও সমান ভূমিকা রাখছে। জেগে ওঠা এসব চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শেষে যমুনা আর্শীবাদ হয়ে দেখা দেয় নদী তীরবর্তী এবং চরে বসবাসকারী মানুষের জীবন। চরের পলি পড়া জমিতে পাট, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম ও বোরো সহ অন্যান্য ফসল আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। কৃষকদের ভাষ্য অনুযায়ী জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন বা কোন বে-সরকারী সংস্থার হস্তক্ষেপে পুঁজি পেলে এসব ফসল চাষের পরিধি আর বিস্তৃতি লাভ করবে। সোনার বাংলায় সোনার ফসল আবাদ করে ঘরে তুলতে পারবো ও ক্ষুধা ও দারিদ্র থেকে মুক্তি পাবো আমরা।
চরবাসীর আফসোস জেলা বা উপজেলার সাথে সরাসরি কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্চে না কৃষকরা। চর থেকে প্রতিদিন নৌকা যোগে নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে নৌকা পথে যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারাতে হয় ব্যবসায়ীদের। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী চরে আমাদের আবাদকৃত ফসল গুলো ক্রয় করতে আসতে চান না। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হলে ব্যবসায়ীদের মিলনমেলা ঘটবে এসব বেলকুচির চর এলাকায়।
বেলকুচি সদর ইউনিয়ন সোহাগপুর চর, মুলকান্দির চর, চর বেলকুচি ও বড়ধুল ইউনিয়নের বংকুরি চর, ক্ষিদ্রচাপড়ি, বিল মহিষার কৃষকদের নিকট জানা যায়, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার সবজি ও ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল আবাদের সময় কিছু ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়লেও আশা করি ঋণ পরিশোধ করেও অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারবো।
বেলকুচি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর যমুনা নদীতে বেলকুচি চর অঞ্চলে ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয়না। বর্ষা মৌসুমে চরগুলোতে পানিতে ডুবে থাকে। ডুবে যাওয়া চরে ব্যাপক হারে পলি জমে। পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে চাষিরা নানান ধরনের ফসলের আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারের পরিমান কম লাগে। এতে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে।