
বেলকুচির বেতিল হালদারপাড়ায় শতাধিক পরিবার পানি বন্দী
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে বেলকুচি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বেতিল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন হালদার পাড়ার শতাধিক জেলে পরিবার বন্যার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা কবলিত এলাকা দৌলতপুর ইউনিয়নের বেতিল বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াপদ বাঁধ (চৌহালী উপজেলার বর্তমান ভূমি অফিস কাজ চলন্ত অবস্থা) সংলগ্ন ওয়াপদা বাধের নীচে ইউনিয়নের শতাধিক জেলে পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে। অপর দিকে বেলকুচি উপজেলার চৌহালী ভূমি অফিস সংলগ্ন থেকে বেতিল চর এলাকা এবং চৌহালীর উপজেলার চর এলাকায় নৌকা যোগে চলে যাচ্ছে নারী পুরুষরা। বেতিল বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় বন্যার কারণে নৌকার ঘাট স্থাপিত হয়েছে। মানুষজন নৌকাযোগে চলাফেরা করছেন।
উপজেলা মৎস্য ইনষ্টিউটিউট এলাকা থেকে একটু দক্ষিন দিকে এবং চৌহালী উপজেলা সীমান্তবর্তী এলাকায়, শতাধিক বাড়িতে কোমর পানি, আবার কারও বাড়িতে হাটু পানি। ঘর থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। চর্তুদিকে পানি আর পানি। যাদের নৌকা আছে তারা বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন। আর যাদের নৌকা নেই তারা অন্যের নৌকায় আনুমানিক ১৫০গজ পাড়ি দিয়ে জেলে পাড়ার মানুষদের ওয়াপদা বাঁধে উঠতে হচ্ছে।
বেতিল গ্রামের আনু হালদার, নারায়ন হালদার, খট হালদার, জীতেন হালদার, বাসু হালদার, নিত্য হালদার, রঘু হালদার, তপন হালদার, কালাচাঁদ, সন্তোষ, পূণ্য, অভিরাম হালদার, সন্তোষ সন্যাসী, সিদ্ধি, শংকর, সঞ্জিব, কালা, রামপ্রসাদ, নকুল, কৃষ্ণ, শম্ভূ এবং গদা ঠাকুর, রকমান, বিধবা সখি বেগম, রেহানা বেগম সহ বেশ কিছু গরীব পরিবার লোকজন জানান, আমরা এখানে বর্তমানে ৫০ ঘর হিন্দু জেলে গোষ্ঠী ও ১৫০ ঘর মুসলিম পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। আমরা একে একে ৮ বার যমুনার কড়ালগ্রাসের ছোবলে বাড়ি ঘর বিলিন হওয়ার পর বেতিল ওয়াপদা বাঁধ সংলগ্ন এসে কোন মতে জীবন জীবিকার তাগিদে এখানে এসে সর্বশেষ ভাবে আশ্রয় গ্রহণ করি। ২ শতাধিক পরিবারের মধ্যে প্রায় শতাধিক পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি উঠেছে। ঘরের চুলাও পানিতে ডুবে গেছে। অনেকেই শুকনো খাবার খেয়ে এবং অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি । বন্যায় বসবাসরত বানভাসী মানুষের মধ্যে এতটাই হতাশা দেখা দিয়েছে, তারা বলছে আমাদের দেখার কেউ নেই।
বেতিল বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন হালদার পাড়ায় জেলে পরিবারের নিকট থেকে জানা যায়, এ এলাকায় পূর্বে ৫৬৫টি ভোট ছিল যা বর্তমানে এই জেলে পাড়ায় ভোট সংখ্যা দাড়িয়েছে আনুমানিক ৪শত। আর ১৬৫ জন ভোটার সম্পর্কে বলা হলে তারা বলেন, অনেক হিন্দু জেলে গোষ্ঠী, ভারতে চলে গিয়েছে। জেলে পাড়ার চারপাশে ময়লা আবর্জনা, কচুরি পানা, কাঁচা ল্যান্ট্রিন থাকার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ময়লা আবর্জনা, টিওবয়েল তলিয়ে গেলে বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং সেই পানি পান করলে মানুষের মধ্যে কি কি রোগ আসতে পারে। সে সম্পর্কে কয়েকজন গ্রাম্য পল্লী চিকিৎসক বলেন, দূষিত পানি এবং তলিয়ে যাওয়া টিউবয়েলের পানি পান করলে যে কোন মুহুর্তে পানি বাহিত রোগের পাদূর্ভাব ঘটতে পারে, সে জন্য পানিতে ফিটকারী অথবা পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। পানিতে বসবাসরত মানুষের মধ্যে সচেতনাবৃদ্ধি যদি না থাকে তাহলে শিশু সহ যে কোন বয়সী মানুষের মধ্যে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওলিউজ্জামান ত্রান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বন্যা কবলিত এলাকা এবং ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং যে সব পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের মধ্যে সরকারী ভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। দৌলতপুর ইউনিয়নের মেঘুল্লা গ্রামে বন্যা ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রান বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে কোন বরাদ্দ আসেনি, আসলে বাকীদেরকে তাদেরকে ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।