
বেলকুচির শ্রমিকরা অধিকার থেকে বঞ্চিত
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার শ্রমিকদের সচিত্রে দেখা যায়, কাজ পাওয়ার অপেক্ষায় রিক্সা এবং ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে প্রহর গুণতে হয় তাদের। মে দিবসের কথা সারাদেশে শতমুখে প্রচারিত হলেও এ দিবস সম্পর্কে কিছুই জানেন না এসব শ্রমিকবৃন্দ।
উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তর থেকে পৌর এলাকার মুকুন্দগাঁতী সোহাগপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মোড় এলাকায় ধুকুরিয়াবেড়া, মবুপুর, জোকনালা, কান্দাপাড়া, কামারপাড়া এলাকার ভ্যান চালকরা সেখানে থেকে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তরে চলে যাচ্ছে যাত্রী নিয়ে। মে দিবস এর তাৎপর্য হিসাবে দেখা যায়, তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করন, শ্রমিকদের অধিকার আদায় এটাই ছিল তাদের দাবি।
রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিকরা বলেন, আজ আমরা লাঞ্চিত ও বঞ্চিত। এর মুল কারণটি কি? তারা বলেন, আজ আমরা দুর-দুরান্ত থেকে ভ্যানে যাত্রী বোঝাই নিয়ে আসি মুকুন্দগাঁতী বাজারে। সেখানে ভ্যান রাখার জন্য কোন জায়গা না থাকার কারণে একদিকে ব্যবসায়ীবৃন্দ অপর দিকে পৌরসভা কর্তৃক নিয়োগকৃত ট্রাফিকদের যন্ত্রনা এবং ব্যবসায়ীদের কথা শুণতেই হচ্ছে।
এদিকে একই জায়গা থেকে চন্দনগাঁতী, বাঁশতলা, বানিয়াগাঁতী এলাকার ভ্যান শ্রমিকরা বলেন, আমাদের জায়গা না থাকার কারণে একদিকে মানুষের গঞ্জনা অপরদিকে রাস্তা ঘাটের বেহাল দশা এটা আমাদের নিত্য নতুন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথায় যাব, কি করব অনেক সময় ভেবেই কুল পাই না।
শ্রমিকদের সচিত্রে দেখা যায়, বয়সে কেউ কিশোর, কেউ যুবক আবার কেউ বা বৃদ্ধ। উপজেলার ভ্যান চালকরা কিছু সময়ের জন্য দিনভর অপেক্ষা করে কাজ না পেয়েই বাড়ি ফিরেছেন অনেকে। এটাই বেলকুচি শ্রমিকদের নিত্যদিনের ঘটনা।
শ্রমিকরা জানান, এখন বৈশাখ মাস, অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে প্রতিদিন রিক্সা বা ভ্যান চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার অধিক খড়তার কারণে ভ্যানে উঠতেই চায়না অনেকে। প্রতিদিন নিয়মিত কাজ মেলে না, মাসে দশ থেকে বারো দিন বেকার থাকতে হয়। এ সময় স্বাভাবিক জীবন যাপনে খুব কষ্ট হয়।
বেলকুচি পৌর এলাকার ভ্যান চালক রহমান (৩০) বলেন, বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের দাম যে হারে বাড়ছে, সে হারে আমাদের প্রতিদিন অর্থ না মেলায় সীমিত আয় দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বস বাস করা অনেক কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, আমার জীবনে দরিদ্রতার করণে দুই মেয়েকে শিক্ষার আলোর মুখ দেখাতে পারিনি।
ভ্যান শ্রমিক আমিরুল ইসলাম (১৮) বলেন, আমার নিজস্ব ভ্যান না থাকার কারণে মহাজনের ভ্যান চালাতে হয়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে ২০০/২৫০টাকা পাই। এটা দিয়ে পরিবার ও এক ছেলে ও এক মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা রিক্সা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত ২০১৬ সালের মে দিবসে শ্রমিকদের ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি আলহাজ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দ ও পৌর মেয়র জনাবা আশানুর বিশ্বাস শ্রমিকদের ভ্যান-রিক্সা রাখার জন্য বাসষ্ট্যান্ড করে দেওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বেলকুচি শ্রমিক ইউনিয়নের দায়িত্বরত সকলের দৃঢ় বিশ্বাস অন্তত সাবেক মন্ত্রী মহোদয় শ্রমিক সংগঠনের দিকে তাকাবেন এবং তাদের দাবি অবশ্যই পুরন করবেন বলে এখনও আমরা আশাবাদী।