
বৈশাখী শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত বৈলকুচির তাঁতীরা
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ। তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক…….মায়ার কুজ্ঝটিজাল যাক দূরে যাক। বিশ্বকবি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সত্যিই সেই চিরন্তনী বাণি বাঙালির মনে-প্রানে জেগে উঠবে মাত্র এক সপ্তাহ পরেই। বাঙালির ঘরে ঘরে এসে যাবে বৈশাখী স্বপ্ন। জেগে উঠবে নববর্ষকে পালন করার উদ্যোগ, গাইবে গান, পড়বে নতুন বৈশাখী শাড়ি। নতুন স্বপ্ন, উদ্যম আর প্রত্যাশার আবির ছড়ানো বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব পয়লা বৈশাখ। সব না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই আবার আসছে পয়লা বৈশাখ। এই আয়োজনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় হাজারো তাঁতীরা এখন ব্যস্ত নানা রংয়ের শাড়ি তৈরিতে। দিনরাত খটখট আওয়াজে মুখরিত জেলার এনায়েতপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর এবং সয়দাবাদের তাঁতপল্লীগুলো। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে বৈশাখের শাড়ি তৈরির ধুম লেগেছে। এখানের হাজারো তাঁতিরা এখন নানা রংয়ের শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। বৈশাখী শাড়ির নকশা না থাকলেই নয়। তাই ছোট-বড় সবার মন ভরাতে তৈরি করা হচ্ছে ডুগডুগি, তবলা, হাতপাখা ও ঘুড়ি, একতারা, দোতারা ও আলপনাসহ নানান প্রতীক সম্বলিত নকশার শাড়ি।
বৈশাখকে ঘিরে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার শাড়ির সুনাম রয়েছে বহুকাল ধরেই। রপ্তানি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। বেলকুচির তাঁত পল্লীর শ্রমিকের হাতের পড়শে তৈরি রং-বেরঙের পোশাকে বর্ণিল হয়ে উঠবে বেলকুচি সহ গোটা দেশ- এমনটা প্রত্যাশা তাঁত মালিকদের।
সোহাগপুর হাটে নরসিংদী থেকে আসা কাপড় ব্যাপারি অনিক সাহা সহ কয়েকজন পাইকার বলেন, ‘আমরা নরসিংদী, ঢাকার গাউছিয়া ও বাবুর হাট থেকে বেলকুচির সোহাগপুর কাপড়ের হাটে এসেছি বৈশাখী কাপড় কেনার জন্য। খুচরা বাজারে বৈশাখের বাজার এখনো লাগেনি। তবে পাইকারি বাজারে কাপড়ের চাহিদা আছে প্রচুর। প্রতি বছর আট থেকে নয় লাখ টাকা কাপড় কিনে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করি। তাতে আমাদের প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হয়।’
এদিকে উপজেলার, মুকুন্দগাঁতী, চন্দনগাঁতী, তামাই, সুবর্ণসাড়া, চালা, শেরনগর, জিধুরী, বেতিল, গোপালপুর এলাকার তাঁত মালিকরা জানান, পহেলা বৈশাখের চাহিদা মেটাতে উপজেলায় প্রায় ২০ লাখ পিস সাদা কাপড় এনে ফ্যাক্টরিতে আল্পনার কাজ করছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক নারী-পুরুষ কাজের সুযোগ পেয়েছেন। একজন শ্রমিক দিনে প্রায় ৬০টি কাপড়ে আলপনা করতে পারেন।
তারা আরও জানান, উপজেলায় বৈশাখী শাড়ির চাহিদা বেশির ভাগ সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যে বেলকুচি উপজেলার তৈরিকৃত কাপড় ঢাকার গাউছিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ, বাবুর হাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে আসে। এদিকে প্রান্তিক তাঁত মালিকরা বলেন, এখন সিজেনাল ব্যবসা, এজন্য শাড়ি তৈরি করতে প্রচুর টাকা লাগে। কোনো ব্যাংক থেকে অল্প সুদে আর্থিক সহায়তা পেলে চাহিদা পূরণ করতে পারতাম। এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।’