
মধুপুর-ঘাটাইলে সাড়ে ৫ হাজার খামারের মধ্যে নিবন্ধিত ৭শ
(সরকার ৫ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত)
রেজাউল করিম খান রাজু, ঘাটাইল: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারি গার্মেন্টস শিল্পের পর পোল্ট্রি শিল্প একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনাময় খাত। পোল্ট্রি শিল্প একদিকে যেমন আমিষ ও প্রোটিনের চাহিদা মেটাচ্ছে অন্যদিকে অসংখ্য শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। এ শিল্পে খামার স্থাপন থেকে শুরু করে ডিম ও মাংস বিক্রি পর্যন্ত রয়েছে নানা সমস্যা ও অনিয়ম। এ প্রতিবেদকের গত এক মাসের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব সমস্যা ও অনিয়নের চিত্র।
টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ঘাটাইলে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ৫ শ ৩১টি পোল্ট্রি খামার রয়েছে। লেয়ার ৩ হাজার ৯শ টি এবং বয়লার খামার ৮শ টি। শুধুমাত্র ঘাটাইলেই রয়েছে ৪ সহ¯্রাধিক। ঘাটাইলের মোট জনসংখ্যার ১৪ ভাগই পোল্টি শিল্পের সাথে জড়িত। দেশের শুধুমাত্র ঘাটাইল উপজেলা থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২২ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। যা ২০০৭-১৮ অর্থ বছরে ছিল ৪ কোটি ৯০ লাখ। গত ৮ বছরে ডিম উৎপাদনের হার বেড়েছে ৩৫০ ভাগ। এ উপজেলার ১১ হাজার ২শ ৫৭টি পরিবার পোল্ট্রি শিল্পের সাথে নির্ভরশীল। এ উপজেলার এত সংখ্যক খামারের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৪৮৪টি খামার।
মধুপুর উপজেলায় লেয়ার ৩৩২টি এবং বয়লার ২৯৯টি। তন্মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে লেয়ার ৭১টি এবং বয়লার ১৬১টি। দুই উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার খামারের মধ্যে নিন্ধিত হয়েছে মোট ৭১৬টি। বেসরকারি লেয়ার খামার নিবন্ধনে এ গ্রেডের ৫ বছরের জন্য সরকারি ফি ১৫ হাজার টাকা আর নবায়ন ফি ১২ হাজার ৫শ টাকা। বি গ্রেডের জন্য ১০ হাজার টাকা,নবায়ন ফি ৭ হাজার ৫শ টাকা। সি গ্রেডের (১০০১-১০০০০ মোরগি) জন্য ফি ৫ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৩ হাজার ৫শ টাকা। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের হিসাব মতে নিবন্ধন না করায় ঘাটাইল-মধুপুরের এসব খামার থেকে সরকার প্রতি ৫ বছরে গড়ে ৫ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২০০৮ সালের জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে বানিজ্যিক খামার ঘনবসতি এলাকা এবং শহরের বাহিরে স্থাপন করতে হবে। একটি বাণিজ্যিক খামার থেকে আরেকটি খামারের দুরত্ব ২০০ মিটার হতে হবে। ব্রিডিং খামারের পাস্পারিক দুরত্ব ৫ কি.মি. হতে হবে। গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক ও প্যারেন্ট স্টক খামারের ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোন খামার স্থাপন করা যাবে না। খামার স্থাপনের পূর্বে পশু সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমোতি গ্রহণ করতে হবে। খামার বা হ্যাচারী স্থাপন পরিকল্পনায় উন্নত জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখ করতে হবে। খামার বা হ্যাচারী স্থাপন পরিকল্পনায় বর্জ্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানের সংস্থানও থাকতে হবে।
মধুপুরের নিবন্ধিত রংধনু পোল্ট্রি ফার্মের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো.আবু জাফর জানান,বড় খামারীরা সরকারকে সুবিধা দিচ্ছে। সরকারও তাদের সহযোগিতা করছেন। তিনি জানান এখন পর্যন্ত খামারী পোল্ট্রি খাতে কোন ব্যাংক লোন পাচ্ছেন না।
কিন্তু এ এলাকার খামারীরা নীাতমালার তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র খামার স্থাপন করছে এবং খোলা জায়গায় পোল্ট্রি বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দুষণ করছে। ঘাটাইলের রসুলপুর ও ধলাপাড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য বংশাই নদীতে ফেলে দিয়ে নদীর পানিও দৃষিত করছে।
সরেজমিনে খামারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, খামার স্থাপন নীতিমালা কঠিন হওয়ায় অনেক খামারি সরকারের নিবন্ধন দিতে পারছেন না। তারা জানা,বিভিন্ন সিন্ডিকেটের জন্য ছোট খামারীরা পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাচ্চা ক্রয় থেকে শুরু করে ডিম বিক্রি পর্যন্ত আয়ের ৪ ভাগের ৩ ভাগই চলে যাচ্ছে মধ্য সত্তাভোগিদের পকেটে। কোম্পানীর প্রতিনিধির সিন্ডিকেটে ১০৫ টাকার বাচ্চা কিনতে হয় ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। আবার ঢাকার তেজগাঁও ও কাওরান বাজারে ডিম বিক্রেতা সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারীরা। অপরদিকে নিম্নমানের কোম্পানীর মেডিসিন ও ভেজাল খাদ্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক খামারী। গাজীপুরের কাশেমপুরস্থ গ্রাম বাংলা পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডের ভেজাল খাদ্যের জন্য ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর এবং রসুলপুর ইউনিয়নের ৮-১০টি খামারের মুরগি মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা। গ্রাম বাংলা পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডের ডিলার মো.আবুল কালাম ঘটনার সততা স্বীকার করে জানান, ভেজাল খাদ্যের জন্য আমার খামারসহ প্রায় ১০টি খামারের ৫০ লাখা টাকার মুরগি মারা গেছে। কোম্পানী ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্তও দেয়নি।
এ ব্যাপারে গ্রাম বাংলা পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.রেজাউল করিম মুঠোফোনে জানান,এতগুলো মুরগি মারা যায়নি। ভাই এই বিষয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করবেন না,আমি তাদের ক্ষতিপূরন দিয়ে দেব।
ধলাপাড়ার মেসার্স রকীব এন্টারপ্রাইজের সত্তাধিকারি ,পাওয়ার ফিস ফিডের পরিবেশক মো.মাসুম সিদ্দিকী জানান, বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে খামারীরা অনেক লাভবান হবে।
এ ব্যাপারে কাজী ফার্মস লি.এর মার্কেটিং ম্যানেজার শ্রী সুভাস জানান, বাচ্চার দাম কত তা সাংবাদিককে বলার এখতেয়ার আমার নেই।
ঘাটাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো.মোস্তাফিজুর রহমান জানান,পোল্ট্রি শিল্প একটি উজ্জল সম্ভাবনাময় খাত। অনেক বেকার যুবক এ পেশায় কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছেন।
বংশাই নদীতে পোল্ট্রি বর্জ্য অপসারণের ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিন আবুল কাশেম জানান,নদীতে পোল্ট্রির বর্জ্য ফেলে তাদের ডেকে ব্যবস্থা নেব। তিনি জানান প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার মাধ্যমে অনেক খামারীকে বায়ূগ্যাস করে দিয়েছি।