
নিউজ ডেস্ক: জনগণের সার্বিক উন্নয়নটাই আমাদের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭৫ এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। তারা সেটা দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা, শুধু প্রধানমন্ত্রী না। আমার দায়িত্ব হচ্ছে, এ দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত করা। তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং দেশের উন্নয়নটা তৃণমূল পর্যায় থেকে করা।
আজ রোববার সকালে আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত নির্যাতিত-নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত ছিল। এ দেশের মানুষের এক বেলা অন্ন জোগানো অত্যন্ত কঠিন ছিল। আর্থ-সামাজিকভাবে আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এই শোষিত-বঞ্চিত মানুষকে শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্ত করার জন্যই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে একটা বিজাতীয় ভাষা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিব প্রথম প্রতিবাদ করেন এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশে, তার আহ্বানে এ দেশের মানুষ যার যা কিছু ছিল তাই হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। আমরা বিজয়ী জাতি।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা মাঠ প্রশাসক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। সুযোগ পেয়েছেন, জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তাদের ভালো-মন্দ জানার সুযোগ পাচ্ছেন। আপনাদের মধ্য থেকে সবাই উচ্চ পদে যাবেন এবং দেশের জন্য আরও উন্নত কাজ করবেন। বাংলাদেশকে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে পরিকল্পনা নিয়েছি, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল কারিগর আপনারাই হবেন। কাজেই এখন থেকে আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ যেন কখনো সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই তো আমাদের এই স্বাধীনতা। যখনই যে যেখানে দায়িত্ব পালন করবেন, অবশ্যই মানুষের কথা চিন্তা করবেন। যে যে এলাকার কাজ করবেন সেই এলাকা সম্পর্কে জানতে হবে। সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ, জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানতে হবে। কীভাবে তাদের উন্নতি করা যায়, সে বিষয়ে আপনাদেরই সব থেকে ভালো সুযোগ রয়েছে।
আমি একটি অনুরোধ করবো, আমাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রজেক্ট বিভিন্ন এলাকায় কার্যকর হয়। অনেক সময় সেসব এলাকায় কাজের সময় জমি নির্দিষ্ট করা বা এ ধরনের নানা কাজে সমস্যা দেখা দেয়। সেখানে আমি মনে করি, সমন্বয় একান্তভাবে প্রয়োজন। কাজগুলো যাতে সুপরিকল্পিতভাবে হয়। সে দিকটায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত। এটা শুধু আপনাদের বলবো না, যারা উচ্চ পর্যায়ে আছে, যারা বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং আমরা যেগুলো করে দেই সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা দেখতে হবে—বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান আমলে আমরা কিন্তু বঞ্চিত ছিলাম। উচ্চ পদে বাঙালিদের কোনো সুযোগই দেওয়া হতো না। অথচ শিক্ষায়-দীক্ষায় সব দিক থেকে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ অর্থাৎ বাঙালিরা ছিল সব থেকে পারদর্শী। কিন্তু তাদের সব সময় বঞ্চিত রাখা হতো। পাকিস্তান নামে দেশটি যখন অর্জন করা হয়, এখানে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছিল পূর্ব বঙ্গের লোকেরা। আর সব থেকে বঞ্চিত আমরাই ছিলাম। আর এই বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে পৌঁছায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯টা মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে। শীত-গ্রীষ্ম প্রচণ্ড আকারে সেখানে দেখা দেয়। এই অবস্থায় তিনি যে কীভাবে কী কষ্টে ছিলেন সেটা কখনো আমাদেরও বলেননি। যদি জিজ্ঞেস করেছি, বলেছেন এটা শুনবি না। শুনলে চোখের পানি রাখতে পারবি না। এই কষ্ট স্বীকার করে বছরের পর বছর তিনি কারাজীবন কাটিয়েছেন। একটা লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা অল্পসংখ্যক মানুষ দেশ সেবার সুযোগ পাচ্ছেন। কাজে আপনাদের চিন্তা চেতনা কল্যাণমূলক হতে হবে। আমাদের লক্ষ্যই থাকবে এ দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সুন্দর জীবন পাবে। আমাদের দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে। সেটা ইনশাল্লাহ আরও কমে যাবে। আমার গ্রাম, আমার শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গ্রামের মানুষ যেন সম্পূর্ণ নাগরিক সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের কাজগুলো বা প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় কি না, মানুষ সেবা যথাযথভাবে পাচ্ছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা সরকারি সংস্থাগুলোর কাজের মান বাড়ানোর জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তি, শুদ্ধাচার কর্মকৌশল, উদ্ভাবন, প্রেক্ষিত পরিকল্পনাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। একটি প্রশিক্ষিত-দক্ষ সিভিল সার্ভিস সরকারি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অন্যতম সহায়ক শক্তি বলে আমি মনে করি। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিই, সেটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়েদের মেধা এবং শক্তি, জ্ঞান, উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা আরও অনেক বেশি স্বচ্ছ, অনেক বেশি শক্তিশালী। কাজে আপনারা জ্ঞান, মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। জনগণের সেবা করবেন, সেটাই আমরা চাই।