
শুভ জামাই ষষ্ঠী-মা ষষ্ঠী পূজোর উৎসব পালিত
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম: দেশব্যাপী সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভ জামাই ষষ্ঠী-মা ষষ্ঠী পূজোর উৎসব মঙ্গলবার (৩০ মে) সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে । জামাই ষষ্ঠী পূর্বেও ছিল, এখনও আছে। তবে শহর অঞ্চলে এর প্রভাব যতটা না বেশী তার চেয়ে বেশী গ্রামে। শুভ জামাই ষষ্ঠীর দিন-মা ষষ্টি দেবীকে আরাধনা করা, জামাই-মেয়েকে নিমন্ত্রণ দেওয়া ও ষষ্টীর দিন মন্দিরে মন্দিরে পূজো দেওয়া এবং জামাই-মেয়েকে ভাল কিছু জামা কাপড় প্রদান করতে ভোলে না শ্বাশুড়ী মায়েরা। জামাই বছর জুড়েও আসলে ষষ্ঠীর দিন যদি জামাই-মেয়ে না আসে তাহলে শ্বাশুড়ী মাতার মন অনেকটাই বিচলিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে যুগে অনেক পরিবারের জামাই-মেয়ে বিদেশে আছে, তারা না আসতে পারলেও ফোনে হলেও শ্বাশুড়ী মাতা আশির্বাদ পৌছিয়ে দেয় জামাই-মেয়েকে। আর এই শুভ দিনে পুত্র-পুত্র বধুকেও শ্বশুড় বাড়ি আসতে বারণ করে না ছেলে মা অর্থাৎ পুত্র বধুর শ্বাশুড়ী মায়েরা। ষষ্ঠীর দিন বাপের বাড়ি আসার জন্য কোনও ছুতো খুঁজতে হয় না মেয়েদের ৷ শুধু জামাই ষষ্ঠী কেন, যে কোনও দিনই চাইলে এখন বিবাহিত মেয়েরা একবার বাবা-মাকে দেখে আসতে পারে ৷ জামাই মাসের পর মাস শ্বশুড় বাড়ী আসলেও একটা বিশেষ দিনে জামাইকে একটু আলাদা করে দেখতে চাওয়ার শখ তো কোন শাশুড়ি মায়ের হতে পারে ৷ আগের প্রজন্মের মানুষেরা যা শিখিয়েছেন স্থান, কাল, পাত্র বদলে গেলেও তিনি যদি নতুন আঙ্গিকে ধারারাহিকতা বজায় রেখেও চলেছে কুলবধুরা এবং শ্বাশুড়ী মাতারা।
ষষ্ঠী পূজোর উপকরণ গুলো হলো-ষষ্ঠী পুজোর দিন ব্রতীরা সকালে স্নান করে উপোস থেকে নতুন তাল পাখার ওপর আম্রপল্লব, আমসহ পাঁচফল আর ১০৮টি দুর্বাবাঁধা আঁটি দিয়ে পূজার উপকরণের সঙ্গে রাখে। করমচাসহ পাঁচ-সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল থালার ওপর সাজিয়ে পুজোর সামনে রাখা হয়। ধান এ পুজোর সমৃদ্ধির প্রতীক, বহু সন্তানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং দুর্বা চিরসবুজ, চিরসতেজ বেঁচে থাকার ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ দুর্বা হল দীর্ঘ জীবনের প্রতীক। শাশুড়ি-মেয়ে-জামাতার দীর্ঘায়ু কামনা করে ধানদুর্বা দিয়ে উলুধ্বনিসহ বরণ করেন। হাতে বেঁধে দেয় হলুদ সুতা। প্রবাদ আছে, জামাই এবং ভাগিনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করে খাওয়াতে হয়। তাই মেয়ে যাতে সুখে-শান্তিতে তার দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারে এজন্য জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন জামাইকে আদর করে বাড়িতে ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত শ্বাশুড়ী পরিতৃপ্ত হয়। আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসমাগ্রীও প্রদান করে।
গ্রামীণ জীবনে এখনো এর সার্বজনীন আবহ দেখতে পাওয়া যায়। জামাই ষষ্ঠীর সমস্ত আয়োজন করা হয় বাড়ির জামাইকে ঘিরে। জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই আচারটি পালন করা হয় বলেই এর নাম জামাই ষষ্ঠী। অবশ্য এর অন্য নাম অরণ্য ষষ্ঠী। পুজো হয়ে থাকে ষষ্ঠী দেবীরও । ষষ্ঠী দেবী মাতৃত্বের প্রতীক। সে কারণে ষষ্ঠী প্রতিমাতে দেখা যায় তিনি কোলে সন্তান ধারণ করে আছেন। ষষ্ঠী মাতার কাছে জামাইদের জন্য দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। যমুনা বা যে কোন নদীর পারে গিয়ে ষাটের জল এনে কুলবধুরা। তা আবার দূর্বা জলে ডুবিয়ে শরীরে ছোঁয়ানো হয়। তারপর জলে ডোবানো পাখার বাতাস করতে করতে ‘ষাট ষাট, বালাই ষাট’ মন্ত্র আওড়ানো, সবশেষে দূর্বা পুঁটুলির চাল আর গামলাতে ডোবানো ফল হাতে দিয়ে প্রাথমিক ষষ্ঠীর ইতি টানা হয়। পরে শ্বাশুড়িরা মেয়ে জামাইকে নিয়ে মন্দিরে যান তাদের ভবিষ্যৎ মঙ্গল কামনার্থে। এর পরের পর্বটি জামাইদের জন্য খুবই লোভনীয়। এ পর্বে দুপুরের ভুড়িভোজ, সাত রকমের ভাজা, শুক্তো, মুগের ডালের মুড়িঘন্ট, বিভিন্ন মাছের বাহারি রকমের পদ, কচি পাঁঠার ঝোল, চাটনি, দই-মিষ্টি, আম কাঁঠাল আরো কতো কি! সকাল থেকে শ্বাশুড়ি মায়েরা এতোসব রান্না করেন। নিজেরা কিন্তু উপবাস থাকেন কেউ কেউ আবার নিরামিশ খান। সনাতন ধর্মাবলম্বী মতে, এই পার্বণ মূলত পরিবেশ রক্ষার্থে গাছকে দেবতা বিশ্বাসে পুজো করা। কেননা এ আয়োজনে বিবিধ গাছের ডাল যেমন দরকার হয় তেমনি এ দিনে সনাতন পরিবারে থাকে বাহারি মৌসুমি ফল। কিন্তু এখন সময়ের পরিক্রমায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এ পার্বনের মূল উদ্দেশ্য, শতবর্ষী ষষ্ঠী গাছ আর পুজোর জন্য পাওয়া যায় না। জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি, যখন আম-কাঁঠালের গন্ধে চারদিক সুবাসিত, তখনই জামাই ষষ্ঠী ব্রতটির হাওয়া ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে প্রভাব ফেলে গ্রামীণ সাধারণ জনজীবনেও। এ সময় শ্বশুর বাড়িতে জামাইরা আমন্ত্রণ পান।। ঠিক পুজোর মত না হলেও বাড়িতে জামাই আদরের ঘটা পড়ে যায়। তবে জামাইবাবাজী খালি হাতে শ্বশুরবাড়ি আসেনা এই বিশেষ দিনটিতে, যতই আত্মভোলা হোক না কেন, শাশুড়ি মায়ের জন্য শাড়ী, ব্যাগ ভর্তি আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, পান-সুপুরী, রুই-কাতল মাছ, মিষ্টি, ছানার সন্দেশ সাথে আনতে ভোলেনা। তবে জামাই ষষ্ঠীর উপাচারগুলো সব অঞ্চলে এক রকম নয়। অঞ্চল ভেদে এর ভিন্নতা রয়েছে।
সিকেএ/জাগ্রতবাংলা