
Exif_JPEG_420
সাংবাদিক জাহানকে হত্যার চেষ্টা: উত্তাল শাহজাদপুর
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ : ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারপতন ঘটাতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাাস ব্যাপী চলেছিল হরতাল। নামাও স্বৈরাচার, আনো গণতন্ত্র। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যূত্থান হলো, পতন হলো স্বৈরাচার সরকারের, উদ্ধার হলো গণতন্ত্রের। আজ প্রায় দীর্ঘ ২৭ বছর পূর্ণ হতে চলেছে গণতন্ত্রের সময়সীমাকাল। কিন্তু অতিব দুঃখ একটাই মানুষের উপর নির্যাতন, নিপিড়ন, মানুষের ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেওয়া সহ চলছে মিডিয়ার উপর হামলা, জুলুম, হত্যাচার, হত্যা। এটাই সত্যিই গণতন্ত্র? প্রশ্ন রয়ে গেলে অভিজ্ঞ মহলের উপর। প্রশ্ন বার বার মনে জেগে উঠে। দুর্নীতিবাজকে দুর্ণীতিবাজ না বলে তাকে একজন সমাজের হিতষী ব্যক্তি বলতে হবে। যদি না বলা হয় তাহলে তাদের দুর্ণীতির ছবি বা লেখা মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপর হামলা। শাহজাদপুর উপজেলায় স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্র থেকে খরব পাওয়া গেছে, বাঘা নৌবন্দর এলাকা এবং দৌলদিয়া নগরবাড়ী এলাকায় একটি তেল ও সার চোরের সন্ধান মিলেছে। বন্দর এলাকায় কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজসে মীর্জা মানিক, সমীর, ফরিদ ও আইয়ুব আলী সহ তাদের সহযোগী নিয়ে প্রতিমাসের ব্যারেলকে ব্যারেল তেল এবং বস্তায বস্তায় সার বিক্রি করছে খোলা বাজারে। অভিজ্ঞমহলের ধারণা এটা একদিকে সরকারী কর্মকর্তা, প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ইন্দনেই এটা চলছে।
সরকার উত্তারঞ্চলে কৃষকের জন্য ডিজেল ও সার দেয়। সেই ডিজেল ও সার বিক্রি করে চোরের দলেরা। এটা শুধু উত্তরাঞ্চলে ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হচ্ছে সরকারের, ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের, সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর।
দৈনিক যুগান্তর ও বিজয় টিভির শাহজাদপুর প্রতিনিধি মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহানকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে শাহজাদপুর। সর্বত্র দিনভর চলেছে প্রতিবাদের ঝড়। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে সাংবাদিক মহল। তারা দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এ দাবীতে তারা গতকাল সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। শহরে বিক্ষোভ শেষে দুপুর ১ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত পৌর এলাকার প্রাণকেন্দ্র মনিরামপুর বাজারের প্রধান সড়কে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত করে। শাহজাদপুরে কর্মরত সকল সাংবাদিকের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফি, সাংবাদিক হাসানুজ্জামান তুহিন, সাংবাদিক ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল-আমিন হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম,এ জাফর লিটন প্রমুখ।
এ মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, শাহজাদপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাংবাদিক মুস্তাক আহমেদ, সাংবাদিক আবুল কাশেম, কবির আজমল বিপুল, কোরবান আলী লাভলু, সাগর বসাক, রানা, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, জেলহক হোসাইন, মোঃ মোশাররফ হোসেন মাসুদ, আলাউদ্দিন হোসেন, যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সদস্য আহসান হাবিব,আরাউদ্দিন আল আজাদ সহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ সহ সর্বস্তরের জনগণ।
মানববন্ধনে বক্তারা এ সময়, বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের ফার্নেস ওয়েল আনলোড ঘাট থেকে প্রায় ৬ লাখ লিটার অবৈধ ডিজেল কালোবাজারে বিক্রির সাথে জড়িতদের দ্রুত সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া সাংবাদিক জাহানের উপর হামলাকারী তেল চোরদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের দাবি জানান। এ ছাড়া আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে দোষিদের গ্রেফতারে ব্যার্থ হলে কঠোর ও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা আল্টিমেটাম দেন।
জানা গেছে, ‘বাঘাবাড়ি নৌবন্দর, ছয় লাখ লিটার অবৈধ ডিজেল কালোবাজারে বিক্রি’ শিরোনামে গত ১৫ জুলাই শনিবার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদের ফলোআপ নিউজ করার উদ্দেশ্যে গত রোববার দুপুর ১২ টার দিকে যুগান্তর ও বিজয় টিভির সাংবাদিক মোঃ মুমীদুজ্জামান জাহান সহ ৩ সাংবাদিক বিপিসির বাঘাবাড়ি ওয়েল ডিপোতে তথ্য সংগ্রহ করতে যায়। এ সময় ডিপো এরিয়ার মধ্যেই সিকিউরিটিদের সামনে প্রকাশে ট্যাংকলরী থেকে তেল চুরির দৃশ্য ধারণ করেন। এতে তেল চুরির সাথে জড়িত শ্রমিক নামধারী সন্ত্রাসীরা তাকে ধাওয়া করে। এ সময় প্রাণ রক্ষার্থে সাংবাদিক জাহান দৌড়ে যমুনা ওয়েল কোম্পানির সহকারী ম্যানেজারের কক্ষে আশ্রয় নিলে সেখানেই তারা হামলা চালিয়ে তাকে বেধরক মারপিট করতে করতে বাইরে টেনে হিচড়ে এনে হত্যার চেষ্টা করে।
এ ছাড়া তার প্যান্ট শার্ট ছিড়ে অর্ধ বিবস্ত্র করে ফেলে। এরপর হামলাকারী সন্ত্রাসীরা তার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হলেও প্যান্টের পকেটে থাকা কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আশপাশের লোকজনসহ সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে যমুনা ওয়েল ডিপোর ম্যানেজার আব্দুল মজিদের কক্ষে নিয়ে গিয়ে তাকে রক্ষা করে।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিক জাহানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে একটি মামলার দায়েরের প্রস্তÍুতি চলছে ।