
সিরাজগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন ইলিয়ট ব্রীজ
চন্দন কুমার আচার্য, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) : ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাসীর প্রহসন মূলক যুদ্ধ, জাফর আলী খান যার অপর নাম মীরজাফর এবং ঘষেটি বেগমের চক্রান্ত, মীর জাফরের নতজানু সৈনিকদের নিয়ে সিংহাসনের লোভে ইংরেজদেরকে সাথে নবাবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে মেরে ফেলা সহ ভারত,পাকিন্তান ও বাংলায় বসবাসের জন্য স্থান করে দিয়েছিল মীর জাফর। দীর্ঘ ১শত ৯০ বৎসরের ইতিহাসের ইংরেজ বাহিনীর শাসনামালে বাংলা তথা ভারত বর্ষে বেশ কিছু স্থাপত্য নির্মান করেছিল। সেই সাথে ইংরেজদের হাতে গড়া সুশোভিত দৃষ্টিনন্দন সিরাজগঞ্জর ইলিয়ট ব্রীজ। সিরাজগঞ্জ জেলার উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার এবং উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের সুযোগ সুবিধা অনেকটাই ভাল। ইলিয়ট ব্রীজ সিরাজগঞ্জ জেলার শহরে অবস্থিত। যেভাবে ইলিয়ট ব্রীজ দর্শন করার জন্য ঢাকা তথা উত্তরবঙ্গের যে কোন জায়গা থেকে ভ্রমন পিপাসু কড্ডার মোড় যার প্রকৃতনাম সদানন্দপুর এবং হাটিকুমরুল নেমে সিরাজগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে ব্রীজটির উপর দিয়ে এপার থেকে ওপার যাতায়াত করলেই বোঝা যাবে ব্রীজটি সৌন্দর্যময়। কিভাবে তৈরি করা হয়েছিল ব্রীজটি। ১শত ২২ বৎসর পূর্বে ইংরেজদের অবস্থানকালীন সময় এই স্থাপত্য নির্মান করা হয়েছিল। ইংরেজ বাহিনীর কল্পনা ছিল বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে চিরস্থায়ী হিসাবে বসবাস কররে। কিন্তু সত্যের আলো ঘুর্ণি ঝড়েও যে নিভে যা না, তা তাদের ছিল অজানা। অবশেষে আন্দোলনের মুখের ১৯৪৭ সালে এ দেশ থেকে বিতারিত হয়েছিল, ফেলে যেতে হয়েছে তারে নির্মানকৃত স্থাপত্য সমূহ।
ইলিয়ট ব্রীজটি কোথায় অবস্থিত এবং কেনই বা ইলিয়ট ব্রীজটি নাম করণ করা হয়েছে? এ প্রশ্নটিও ছোট ছেলে মেয়েরা অবশ্যই শিক্ষক বা গুরুজন ব্যক্তিরদের নিকট রাখতে পারে। ব্রীজটি ফ্রেড ইলিয়ট সাহেবের নামে নাম করণ করা হয়েছিল। যেভাবে ইলিয়ট ব্রীজ তৈরি করা হয়েছিল তার বর্ণনা অনেকটাই অজানার বিষয়। নব প্রজন্মকে জেলার দৃষ্টি নন্দন স্থান সমূহ সম্পর্কে না জানলে ইতিহাসের পাতা স্তুপাকার হয়ে পড়ে থাকবে ঘর বা পাঠশালার আলমারির ভিতর। ইলিয়ট ব্রীজ সিরাজগঞ্জ শহরের কাটা খালের উপরে লোহা ও সিমেন্টের সমন্বয়ে তৈরী। সিরাজগঞ্জ শহরকে দেখার জন্য কাঁটাখালের উপরে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু করে ইংরেজ এসডিও মিঃ বিটসন বেল আই, সি, এস, সাহেব ১৮৯৫ সনে ৪৫,০০০ টাকা খরচ করে বাংলার তৎকালিন ছোট লাট স্যার আল ফ্রেড ইলিয়ট সাহেবের নামানুসারে এই ব্রিজ তৈরী করেছিলেন। সে আমলে সন্ধ্যার পর ইলিয়ট ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে সিরাজগঞ্জ শহরের একটি ভিন্নতর রূপ নজরে পড়তো। বর্তমানে উজ্জল নিয়ন বাতির আলোকমালায় সিরাজগঞ্জের প্রতিটি সড়ক পথ শুধু উদ্ভাসিত নয়; সেই সাথে দোকানের রডলাইট ও হেড লাইটের আলো রাতের অন্ধকারকে দূরে সরিয়ে রাখে। তখন ইলিয়ট ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলে দেখা যেত ঘন অন্ধকারের মধ্যে আশপাশের কোনো অসিত্বই নাই। দিনের বেলায় দেখা গেছে, শহর থেকে অনেক দূরে অসংখ্য গ্রাম জনপদ গা-ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু রাত্রিবেলায় সেই ইলিয়ট ব্রিজের উপর সেই একই জায়গায় দাঁড়ালে মনে হতো, বিশ্বচরাচরে আর কোথাও কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই। তৎকালীন যুগে ইলিয়ট ব্রিজের দু’পাশে, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব পশ্চিমে এক মাইল পরিসর এলাকাতেই সমস্ত দেশটা এসে ভীড় জমিয়েছে। যা এখনও বাতির আলোয় দাড়িয়ে গল্প গুজব এবং আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে।