
সিরাজগঞ্জে বলরাম রাসযাত্রা শুরু
চন্দন কুমার আচার্য, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে জেলায় সদর উপজেলায় শ্রীশ্রী যুগলকিশোর মন্দির ও কালীবাড়ি মন্দির, উল্লাপাড়া উপজেলার শ্রীশ্রী বলরাম জিউ মন্দির ও শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনায় শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে বলরাম রাস যাত্রা শুরু হয়েছে।
উল্লাপাড়ায় শ্রীশ্রী বলরাম জিউ মন্দিরে মঙ্গলবার সকালে বাল্য ভোগ হয়েছে এবং সন্ধ্যায় হোলী কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হবে। পোরজনা শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দিরে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ ও ধর্ম আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়ায় গত সোমবার জেলার সনাতন ধর্মালম্বীরা এলাকায় বলরাম রাস পুর্ণিমা শুরু হওয়ার পর পর দুপুরে এবং রাত্রিতে ভোগ আরতী ও মঙ্গলগীতি অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়ায় বেলকুচি উপজেলায় পারসগুনা-সোনামুখী গ্রামে গজেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এর বাড়ীতে বলরাম রাসযাত্রা উপলক্ষ্যে অধিবাস কীর্ত্তন ও মঙ্গলঘট স্থাপন, শ্রীকৃষ্ণ পূজা, পুস্পাঞ্জলী, নগর কীর্ত্তন (নগর পরিক্রমা), হোলি কীর্ত্তন, কবিগান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠান চার দিন ব্যাপী চলবে।
সোমবার রাত্রী থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত চলবে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে মঙ্গলবার পুস্পাঞ্জলী দান, বুধবার নগর কীর্ত্তন ও বাংলা নববর্ষের পর রবিবার হোলী কীর্ত্তন ও কবিগান। হোলী কীর্ত্তন পরিবেশনায়-জয় রাধা কৃষ্ণ সম্প্রদায়, রাধা গোবিন্দ সম্প্রদায় ও হরিবাসর সম্প্রদায়। কবিগান পরিবেশন করবেন-বগুড়া থেকে আগত শ্রী কালাচাঁদ সরকার, জোকনালা গ্রামের শ্রী অনিল চন্দ্র সরকার, গোপালপুরের শ্রী জয়কৃষ্ণ সরকার, ঝাউপাড়া গ্রামের শ্রী হরেন্দ্রনাথ সরকার।
রাসযাত্রা কি? রস থেকেই রাস শব্দের উৎপত্তি। রাস হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের সর্বোত্তম মধুর রস। আর লীলা মানে খেলা। অর্থাৎ রাসলীলার মানে শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীমতি রাধারানী এবং তাদের সখা-সাথীদের লীলাখেলা। রাস লীলা ছয়টি ভাগে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে- মহারাস, বসন্তরাস, নিত্যরাস, কুঞ্জরাস, গোপীরাস ও উদখুলরাস। এর মধ্যে মহারাস হচ্ছে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণে রাস লীলা হেমন্তকাল অর্থাৎ কার্ত্তিক বা অগ্রহায়ন মাসে হয়ে থাকে তার নাম শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা। বসন্তকালে চৈত্রের শেষান্তে পূর্ণিমায় যে রাসযাত্রা শুরু হয় তার নাম শ্রীশ্রী বলরাম রাসযাত্রা।
বলরাম হলেন শ্রীকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠভ্রাতা। তিনি বলদেব, বলভদ্রও হলায়ধু নামেও পরিচিত। বৈষ্ণবরা বলরামকে বিষ্ণুর অবতার-জ্ঞানে পূজা করেন। ভাগবত পুরাণের তালিকাতেও তাঁর নাম আছে। সনাতনধর্মীরা সবাই তাঁকে বিষ্ণুর শয্যারূপী শেষনাগের একটি রূপ বলে মনে করে। দ্বাপর যুগের শেষে বলরামের জন্ম হয় রোহিণীর গর্ভে ।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে বলরাম কোনও পক্ষ অবলম্বন করেননি। একজন আদর্শ ভ্রাতা হিসেবে বলরাম তুলনাহীন। বাল্যকাল থেকে কৃষ্ণ তাঁকে কম জ্বালাননি। তবু সবকিছু হাসিমুখে সহ্য করেছেন। বহু বিপদে শ্র্রীকৃষ্ণকে আগলে রেখেছেন। বলরাম অত্যন্ত পতœীনিষ্ঠ। স্ত্রী রেবতী তাঁর চাইতে ঢের বড়, একেবারে অন্য যুগের নারী। তাঁর প্রতি বলরামের প্রেম এতটাই দৃঢ় যে, তিনি দ্বিতীয় বিবাহের কথা ভাবেনইনি। তাঁর দুই পুত্র নিষ্ঠা এবং উল্মুক। বলরাম পূর্বজন্মে ছিলেন রামের ভ্রাতা লক্ষ্মণ। তিনি অনুরোধ করেন তাঁকে যেন তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হিসেবে একজন্ম কাটাতে দেওয়া হয়। বলরামের অস্ত্র এক বিশাল লাঙল। তিনি এ কারণে ‘হলধারী’ নামেও পরিচিত। তিনি সর্বদা নীলাম্বরধারী। তিনি তুমুল পানাসক্ত ছিলেন। এই আসক্তি নিয়ে অনেকবার অনেক রকম সমস্যাও হয়। তিনি ভীম এবং দুর্যোধনের গুরু। তাঁরা তাঁর কাছে গদাযুদ্ধ শিখেছিলেন।