
সুয়েজ খালের ইতিহাস
জাগ্রতবাংলা ২৪ ডটকম: কৌশলগতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাল হচ্ছে সুয়েজ খাল। এ খালের জন্যই ইংরেজরা ইজিপ্ট দখল করে নিয়েছিল। সুয়েজ খাল বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ কৃত্রিম খাল। সিনাই পেনিনসুলার পশ্চিমে অবস্থিত সুয়েজ খাল লম্বায় ১৬৩ কিলোমিটার এবং প্রশস্তে ৬০ থেকে ৩০০ মিটার। এটি ভূমধ্যসাগরের পোর্ট সৈয়দ এবং রেড সির সুয়েজের মধ্য দিয়ে প্রবহমান।
সুয়েজ খালের ইতিহাস ঃ
অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে জলপথে সংযোগ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততর করার বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপর ইজিপ্ট অভিযানে আসেন নেপলিয়ন বোনাপার্ট। তিনি প্রথম ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরের সংযোগ করার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বুঝতে পারেন। ইজিপ্ট অভিযানে নেপলিয়নের সহযাত্রী ইঞ্জিনিয়ার লেপিরে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। সে সময় নেপলিয়ন একটি প্রজেক্ট চালু করেন। কিন্তু প্রথম জরিপের পর তার এ প্রজেক্ট বাদ দেয়া হয়। জরিপে দেখা যায়, ভূমধ্যসাগরের চেয়ে লোহিত সাগর ১০ মিটার উচু। ফলে এদের মধ্যে সংযোগকারী খাল করতে অনেক খরচ হবে। পাশাপাশি এটি বেশ কষ্টসাধ্য হবে। তবে সে সময় ফরাশি বুর্জোয়া গ্রুপ এ প্রকল্পের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। ১৮৫৪ সালে ইজিপ্টে সাইদ পাশা ক্ষমতাসীন হলে সংযোগ খালের ব্যাপারে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সুয়েজ খাল প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ফর্দেন্যা দ্য লেমে। সুয়েজ খালের নকশা বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলীরা মিলে তৈরি করেন। এ কাজে ইজিপ্ট সরকারের পক্ষে কাজ করেছেন দুজন ফরাশি প্রকৌশলী।
সুয়েজ খাল খনন করতে ১৮৫৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর সুয়েজ খাল কম্পানি গঠন করা হয়। সে সময় এ কম্পানির মোট মূলধন ছিল ২০ কোটি ফ্রা। বেশ কিছু শর্ত নিয়ে কাজ শুরু করে এ কোম্পানি। খাল খননের প্রয়োজনীয় শ্রমশক্তির পাচ ভাগের চার ভাগই ইজিপ্ট সরকারকে সরবরাহ করতে হয়। খালের উভয় তীরে দুই কিলোমিটার জমি কম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে হয়। এছাড়া জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুয়েজ খালকে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং চুক্তির মেয়াদ ৯৯ বছর নির্ধারণ করা হয়।
১৮৫৯ সালের ২৫ এপ্রিল ভূমধ্যসাগর এবং মানজাল হ্রদের মধ্যবর্তী এলাকায় খনন কাজ শুরু করা হয়। জানা যায়, ৩০ হাজারের বেশি লোক দিয়ে খাল খননের কাজ করানো হয়। সাইদ পাশা মারা যাওয়ার পর ইজিপ্টের দায়িত্ব পালন করেন ইসমাইল। তিনি কোম্পানির কঠিন শর্ত পছন্দ করতেন না। ২০ হাজার শ্রমিকের পরিবর্তে তিনি মাত্র ছয় হাজার শ্রমিক সরবরাহের কথা বলেন। এটি নিয়ে ইসমাইল এবং কোম্পানির মধ্যে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। এ কারণে সুয়েজ খাল খননের কাজে অচলাবস্থা দেখা দেয়। ইসমাইল সম্রাট তৃতীয় নেপলিয়নকে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্ব দেন। অবশেষে ইসমাইলের ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এ বিরোধের মীমাংসা হয়। বিবাদ মীমাংসার পর খাল খননের কাজ দ্রুত চলতে থাকে। ১৮৬৮ সালের মধ্যে খাল খননের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর সুয়েজ খালকে ট্রাফিকের জন্য খুলে দেয়া হয়। তবে ১৮৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুয়েজ খাল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
সুয়েজ খালের গুরুত্ব ঃ
১৯৫৫ সালের দিকেই ইওরোপের মোট তেলের দুই-তৃতীয়াংশই সুয়েজ খাল দিয়ে পরিবহন করা হতো। বর্তমানে বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যের শতকরা ৭.৫ ভাগই সুয়েজ খালের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ইজিপ্ট সুয়েজ কানাল অথরিটি (এসসিএ) এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৩ সালেই ১৭ হাজার ২২৪টি জাহাজ সুয়েজ খাল দিয়ে পার হয়েছে। অর্থাত পৃথিবীর শিপিং ট্রাফিকের শতকরা ৮ ভাগই হয়েছে খালটি দিয়ে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫-এর জুলাই থেকে ২০০৬ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩.২৪৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাওয়া গেছে সুয়েজ খাল থেকে। এসব পরিসংখ্যানই সুয়েজ খালের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়। সুয়েজ খাল গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেয়।
সূত্র ; অ/এ্ন