
১৮৯৬ অলিম্পিকের যাত্রা শুরু॥ ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশের অংশ গ্রহণ
জাগ্রতবাংলা ডেস্ক: ৫ এপ্রিল। ১৮৯৬ সালের এ দিনে এথেন্সে আধুনিক অলিম্পিক ক্রীড়ার সূচনা হয়। ১৩টি দেশ এবং ৬০ হাজার দর্শক এই ক্রীড়ায় অংশ গ্রহণ করছিলো। নতুন পর্যায়ে এ ক্রীড়া শুরু হওয়ার ১৫শ বছর আগে রোমাক সম্রাট প্রথম থ্রিওডোসিয়াস অলিম্পিক ক্রীড়াকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। ফ্রান্সের ব্যারন পিয়ের দ্য কুবের্ত্যার উদ্যোগে পরবর্তীতে অলিম্পিক গেমস পুনঃরায় চালু হয়। প্রাচীন গ্রীসে দেবতাদের বাসভূমি বলে গণ্য অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে দেবতাদের সম্মানার্থে খেলাধূলার যে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হতো তাকে অলিম্পিক গেমস নামে অভিহিত করা হতো। তখন থেকে এই খেলা চার বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারনে এবং ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতা স্থগিত ছিল। অলিম্পিকের ইতিবৃত্ত ৭৭৬ খৃস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু করে ৩৯৩ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১২০০ বছর প্রাচীন গ্রীসের এলিসের অলিম্পিক ভিলেজে অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে দেবতা জিউসের উদ্দেশ্যে ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হত অলিম্পিক গেমস। তার প্রায় ১৫০০ বছর পর ফরাসী শিক্ষাবিদ ব্যারন পিয়েরে ডি কুব্যার্তা প্রাচীন গ্রীসের সে ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরিত করে আধুনিক অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সচেস্ট হন । কুবের্ত্যার সক্রিয় প্রচেস্টায় ১৮৯৪ সালে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি আর ১৮৯৬ সালে গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে বসে আধুনিক কালের প্রথম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমস। আধুনিক কালের বৃহত্তম খেলাধুলার আসর অলিম্পিক গেমস প্রতি ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৮৯৬ সাল থেকে। এখন পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ অংশ নিচ্ছে অলিম্পিক গেমসে। দিনকে দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে অলিম্পিকের। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়। অলিম্পিকের স্থান আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC= International Olympic Committee) নির্বাচন করে থাকে আয়োজক শহরকে। অলিম্পিক গেমসের সম্ভাব্য বছরের ৭ বছর আগে এই নির্বাচন করা হয়। চলতি ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের আয়োজক শহরের নির্বাচন করা হবে। এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সিডনী ছাড়া দক্ষিন গোলার্ধের কোন শহরে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় নি। অলিম্পিক গেমসের এ নিয়ম এসেছে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক থেকে যেখানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হত নগর-রাস্ট্র গুলোর মধ্যে। সবচেয়ে বেশী বার অলিম্পিক সবচেয়ে বেশী বার অলিম্পিক আয়োজক শহর-লন্ডন-১৯০৮,১৯৪৮,২০১২ সাল। দুইবার আয়োজক শহর গুলো হল-এথেন্স, প্যারিস এবং লস এঞ্জেলস। ১৯০৬ সালে এথেন্সে অনুষ্ঠিত গেমস আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক স্বীকৃত নয়। দেশ হিসেবে বিবেচনা করলে আমেরিকার যুক্তরাস্ট্র সবচেয়ে বেশী চারবার অলিম্পিক গেমসের আয়োজক দেশ ১৯০৪, ১৯৩২, ১৯৮৪, এবং ১৯৯৬। এপর্যন্ত আয়োজিত সবগুলো অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে ৫টি দেশ- গ্রীস, বৃটেন, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়া । প্রতিটি অলিম্পিকে সোনা জেতা একমাত্র দেশ হল বৃটেন। অলিম্পিক গেমসের প্রকার ভেদ সাধারনভাবে অলিম্পিক গেমস বলতে গ্রীস্মকালীন অলিম্পিক গেমসকে বোঝানো হলেও ১৯২৪ সাল থেকে শীত কালীন অলিম্পিক গেমস এর প্রচলন হয়। শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক একই বছর অনুষ্ঠান শুরু হলেও ১৯৯২ সালে এসে শীত এবং গ্রীষ্ম অলিম্পিক ২ বছর পর পর অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে শীতকালীন অলিম্পিক ১৯৯২ সালের পর ১৯৯৪ সালে পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ অলিম্পিক গেমস বা “প্যারা অলিম্পিক গেমস” অনুষ্ঠীত হয়ে আসছে ১৯৬০ সাল থেকে। অলিম্পিক গেমসের আয়োজক শহর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের পর পরই প্যারালিম্পিক গেমসের আয়োজন করে থাকে। যুবক বয়সীদের জন্য “ইয়ুথ অলিম্পিক গেমস” প্রথম অনূষ্ঠিত হয় সিঙ্গাপুরে, ২০১০ সালে । অলিম্পিক গেমস এবং মহিলা ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অলিম্পিক গেমসে প্রথম মহিলাদের অংশগ্রহন শুরু হয়। সৌদি আরব, কাতার এবং ব্রুনেই এই তিন দেশ থেকে কোন মহিলা ক্রীড়াবিদ এ যাবত অংশ নেয়নি। অলিম্পিকের পতাকা এটি হল সাদার উপর পাঁচটি রঙ্গীন বৃত্ত। পাঁচটি বৃত্ত দিয়ে পৃথিবীর পাঁচটি প্রধান ভৌগলিক এলাকা, এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলেশিয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। বৃত্ত গুলোর রঙ পর্য্যায় ক্রমে নীল, হলুদ, কাল, সবুজ ও লাল। পৃথিবীর সমস্তদেশের পতাকায় এর অন্তত একটা রং বিদ্যমান। বৃত্ত গুলো একে অপরের সাথে জুয়ে থাকার অর্থ হল যে অলিম্পিক গেমস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলোকে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
সূত্র: ইন্টারনেট